২০২৩ সালের অগাস্ট মাসে প্রতিমা পাল বাচ্চা প্রসবের জন্য এগরার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। ২৪ অগাস্ট সকালে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ প্রতিমার পরিবারকে জানায়, তার সদ্যোজাত সন্তান জন্মের পরপরই মারা গেছে এবং শিশুটির মৃতদেহ ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শোকাহত পরিবার কোনও প্রশ্ন না করে প্রতিমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
আরও পড়ুন-ধর্মেন্দ্র কি আদৌ লাইফ সাপোর্টে? বলিউডের ‘হি-ম্যান’-কে নিয়ে সানির টিম দিল বড় খবর
advertisement
কিন্তু এরই মধ্যে ঘটে যায় চাঞ্চল্যকর ঘটনা। অভিযোগ, ওই নার্সিংহোমের মালিক এক দালালের মাধ্যমে রামনগরের এক মহিলার হাতে প্রায় দু’লক্ষ টাকার বিনিময়ে ওই নবজাতককে বিক্রি করে দেয়। চার দিন পর, অর্থাৎ ২৮ অগাস্ট, শিশুটিকে নিয়ে ওই মহিলা টিকা দেওয়ার জন্য দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন। সন্দেহ হওয়ায় হাসপাতাল কর্মীরা খবর দেন পুলিশে।
আরও পড়ুন-‘কার পা ছুঁয়ে আর্শীর্বাদ নেব…!’ মেকআপ শিল্পী অশোক সাওয়ান্তকে হারিয়ে শোকে পাথর অভিষেক বচ্চন
পুলিশ দ্রুত গিয়ে তদন্তে নামে এবং মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে তিনি টাকার বিনিময়ে নার্সিংহোমের মালিকের কাছ থেকে শিশুটিকে কিনেছেন। ঘটনার সূত্র ধরে পুলিশ নার্সিংহোমের মালিক, তার স্ত্রী, এক দালাল এবং ক্রেতা মহিলাকে গ্রেফতার করে। পরবর্তী সময়ে তদন্তে জানা যায় প্রতিমা পালই শিশুটির জন্মদাত্রী। প্রায় দশ দিন পর পুলিশ তাকে খুঁজে পায় এবং জানায় তার সন্তান জীবিত রয়েছে ও সুস্থ আছে।
তবে এখানেই শেষ নয়—বহু আইনি জটিলতার কারণে শিশুটিকে অবিলম্বে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি। আদালতের নির্দেশে তাকে কাঁথির একটি হোমে রাখা হয়। সেখানেই কেটে যায় প্রায় দু’বছর।
অবশেষে চলতি মাসের ৩ তারিখে প্রতিমা পাল জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের দফতরে যোগাযোগ করেন। জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব সুদীপা ব্যানার্জির নেতৃত্বে শুরু হয় দ্রুত পদক্ষেপ। আদালত, থানা ও হাসপাতাল—সব দিক থেকে প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করে, মাত্র দশ দিনের মধ্যেই সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হয়।
অবশেষে সোমবার বিকেলে নিমতৌড়ির চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির অফিস থেকে প্রতিমা পালকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তার শিশুপুত্রকে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সন্তানকে কোলে নিয়ে প্রতিমা পাল কান্না সামলাতে পারেননি।
তিনি বলেন, যেদিন নার্সিংহোমে আমার ছেলে জন্মেছিল, সেদিনই আমাকে জানানো হয়েছিল সে মারা গেছে। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। পরে জানতে পারি, আমার সন্তান জীবিত এবং অন্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এতদিন আইনি জটিলতার কারণে তাকে নিজের কাছে আনতে পারিনি। আজ জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সহায়তায় ছেলেকে ফিরে পেলাম—এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দ।
জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব সুদীপা ব্যানার্জি বলেন, দিন কয়েক আগে প্রতিমা দেবী আমাদের দফতরে এসেছিলেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত নথি যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করি। আদালত ও প্রশাসনের সহায়তায় মাত্র দশ দিনের মধ্যেই আমরা শিশুটিকে তার মায়ের হাতে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি।
