বীরভূমের মাড়গ্রাম হাই স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র শ্যামল দাস। বাবা পেশায় তাঁত শিল্পী ৷ অভাবের পরিবারের ছেলে শ্যামল সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় এই অভিনব প্রযুক্তির জলের ট্যাঙ্কটি আবিষ্কার করেন।দিন মজুরিতে তাঁত বুনে রোজগারের টাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় শ্যামলের বাবা গোপীনাথ দাসকে। সংসারের অভাব মিটিয়ে ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারেননা তিনি ৷ কিন্তু মেধাবী এই ছাত্রের পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা স্কুল।
advertisement
অভিনব এই জলাধার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় স্থান অর্জন করতে পারে সেই লক্ষ্যে শ্যামলের গবেষণার সমস্ত খরচ দিতে এগিয়ে এসেছেন স্কুলের শিক্ষকেরা। সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় স্কুলের বিজ্ঞান প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় এই অভিনব জলাধারটি বানিয়েছিলো শ্যামল। কী সেই মডেল ? শ্যামল জানাচ্ছে, সে এমন একটি সিমেন্টের জলের ট্যাঙ্ক তৈরি করেছে যাতে গরমের সময় জল ঠান্ডা থাকবে। আবার শীতের সময় জল থকবে গরম। কিন্তু কীভাবে? শ্যামলের কথায়, “যে জলের ট্যাঙ্ক তৈরি করা হবে তার দুটো স্তর হবে। দুটো স্তরের মাঝের ফাঁকা জায়গায় বালি ভরে দেওয়া হবে। ট্যাঙ্কের ঢাকনা থাকবে কাঠের। গরমের সময় ট্যাঙ্কের জল ভরার সময় কিছু জল উপচে পড়বে দুটি ট্যাঙ্কের মাঝের স্তরে বালির মধ্যে। ফলে বাইরের তাপ ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। জল থাকবে ঠান্ডা। এবার শীতের সময় জলের পিভিসি পাইপের বদলে কপার পাইপ লাগাতে হবে। ঢাকনা হবে কাঁচের। ফলে শীতের সময় জল থাকবে স্বাভাবিক গরম”।
এমন এক মডেল গড়েই জেলা এবং রাজ্যস্তরে চতুর্থ স্থান দখল করেছিল সে। কিন্তু ওই মডেল নিয়ে দিল্লি গিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করে শ্যামল। এরপরেই বিষয়টি দূতাবাসের মাধ্যমে জাপান সরকারের নজরে আসে। সেখানে জাপান সরকারের “অনুপ্রাণিত পুরস্কার স্কিমে” সাকুরা এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশ নেবে শ্যামল। ২৮ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত চলবে সেই বিজ্ঞান প্রদর্শনী। সেই প্রদর্শনীতে ডাক পেয়েছে শ্যামল। সেখানে অংশগ্রহণ করবে সে। দিন দু’য়েক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে রাজ্য হয়ে সেই মেল এসে পৌঁছয় স্কুলে। ই-মেল পেয়েই খুশির হাওয়া স্কুলে। প্রধান শিক্ষক সমীরণ মোস্তাফা বিশ্বাস বলেন, “শ্যামল প্রথম থেকেই মেধাবী। ওর এই বিজ্ঞান মনস্কতায় আমরা খুশি। আমরাই স্কুল থেকে ওর পাসপোর্ট করে দিয়েছি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এই ছাত্রকে আর্থিক সাহায্য করলে তার এগিয়ে যাওয়ার পথ আরও মসৃণ হবে”।
বাবা গোপীনাথ দাস বলেন, “আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। মাটির বাড়ির মধ্যে ছেলেকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী বাস করি। ছেলের এই সাফল্যে আমরা গর্বিত। তবে এর পিছনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবদান রয়েছে যথেষ্ট”।