এখানে আটকে রাখা হত স্বাধীনতার সংগ্রামে যুক্ত বিপ্লবীদের। নিরস্ত্র বন্দিদের উপর চালানো হত অত্যাচার। যেখানে আজ ভারতের প্রাচীনতম প্রযুক্তি বিদ্যার প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়্গপুর প্রতিষ্ঠিত, এককালে সেটি ছিল হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প বা হিজলি বন্দিনিবাস, যা আজও বহু স্মৃতি বহন করে চলেছে। অন্যদিকে বিপ্লবের পীঠস্থান মেদিনীপুর বহন করে চলেছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু-সহ একাধিক বিপ্লবীদের নানা ইতিহাস। আঁকড়ে ধরে রেখেছে এককালের স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রতিটি দিন। দেশকে স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একদল তরুণ তরুণী।
advertisement
আজ যেখানে আইআইটি খড়গপুর, সেখানেই ছিল বিপ্লবীদের বন্দিনিবাস। সশস্ত্র আন্দোলন হোক কিংবা অসহযোগ আন্দোলন, ব্রিটিশ পুলিশের হাতে বন্দি হতে হয়েছিল একাধিক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে। বন্দি করা হয় হিজলি বন্দি নিবাসে। ১৯৩১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রাত্রি প্রায় সাড়ে ন’টা নাগাদ, নিরস্ত্র বন্দিদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনী। চালানো হয় গুলিও। নিরস্ত্র বন্দিদের উপর গুলি চালানোর ঘটনায় মৃত্যু হয় দুই বীর বিপ্লবীর। সুভাষচন্দ্র বসুর সহপাঠী সন্তোষ মিত্র, এবং মাস্টারদা সূর্য সেনের অনুগামী তারকেশ্বর সেনগুপ্তর মৃত্যু হয়।
ছাত্রাবস্থায় রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সহপাঠী সন্তোষ মিত্র। তাঁর জন্ম ১৯০০ সালের ১৫ অগাস্ট এবং মৃত্যু ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩১। মাত্র ৩১ বছরের জীবন, দেশের স্বাধীনতার জন্য নিবেদন করেছিলেন। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ফলে কারাদণ্ডিত হন। এছাড়াও শ্রমিক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯২৩ সালে গুপ্ত বিপ্লবী দলের সঙ্গে যোগদান করে বিপ্লবী কর্মে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম করেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে। চট্টগ্রামে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় গোপনে অস্ত্র সরবরাহ করতেন বিপ্লবীদের। এরপর গ্রেফতার হলে তাঁকে হিজলি জেলে পাঠানো হয়। এর পর নির্বিচারে চালানো গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর। খবর পেয়ে সুভাষচন্দ্র ও যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত হিজলিতে আসেন।
আরও পড়ুন : ময়দা, কাজুকে চিনির রসে জারিয়ে তৈরি প্রাচীন স্বাদ…জানুন ২৫০ বছরের মিষ্টির কথা
ইতিহাসের পাতা ওল্টালেই দেখা যাবে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অন্যতম নাম হিজলি।দেশকে পরাধীনতার গ্লানিমোচনের জন্য ইংরেজদের হাতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন অনেকে। এখন যেখানে খড়্গপুর আইআইটি-র পুরনো ভবন, পরাধীন ভারতে সেখানেই ছিল হিজলি বন্দি নিবাস। অদূরেই আছে অতীতের প্রথম মহিলা বন্দিদের রাখার জন্য জেলভবন। স্বাভাবিকভাবে ব্রিটিশ শাসকের অত্যাচারে সহপাঠীকে হারিয়ে কষ্ট পেয়েছিলেন নেতাজি। এখনও সেদিনের সেই ইতিহাস বহন করে চলেছে মেদিনীপুর।