মাতঙ্গিনী হাজরার জন্ম তমলুকের হোগলা গ্রামে। মাত্র ১১ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে আসেন তমলুকেরই আলিনান গ্রামে। বিয়ের ৬ বছরের মাথায় স্বামী ত্রিলোচন হাজরা মারা যান। তারপর থেকেই বাড়ির অদূরে এক ছোট্ট কুটিরে বৈধব্য জীবনযাপন শুরু করেন মাতঙ্গিনী হাজরা। এমনকি নিজের জীবনযাপনের জন্য সংসার থেকে টাকা নিতেন না। অন্যের বাড়িতে মুড়ি ভাজা থেকে ঢেঁকিতে ধান ভাঙ্গানো-সহ নানা কাজকর্ম করে জীবনধারণ করতেন তিনি। বৈধব্য জীবনযাপনের সময়ে স্বদেশীদের সাহায্য করতে শুরু করেন তিনি। তারপর লবণ সত্যাগ্রহ-সহ বিভিন্ন আন্দোলনে যোগদান করে প্রত্যক্ষভাবে স্বদেশী আন্দোলনে যুক্ত হন। ১৯৩৮ সালে নাড়াজোল রাজবাড়ির মাঠে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন মাতঙ্গিনী হাজরা। তাঁকে গ্রেফতার করে ইংরেজ পুলিশ। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
advertisement
১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ২৯ সেপ্টেম্বর তমলুক থানা দখল অভিযানে মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। মাতঙ্গিনী হাজরা পরপর ব্রিটিশ পুলিশের গুলির ঘায়ে আহত হয়ে লুটিয়ে পড়লেও, জাতীয় পতাকা মাটিতে পড়তে দেননি। সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। স্বাধীনতা সংগ্রামে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদানের কথা অনস্বীকার্য৷ তাঁর বাসভূমি তমলুকের শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লকের আলিনান এলাকাকে আগেই আদর্শ গ্রাম করা হয়েছে। বীরাঙ্গনার জীবন কাহিনি ও স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা বর্তমান প্রজন্ম ও আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে আলিনান গ্রামে মাতঙ্গিনী হাজরার মিউজিয়াম ও মেমোরিয়াল গ্যালারি তৈরি হয়েছে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে।
আরও পড়ুন: আরজি করে ডাক্তারি ছাত্রীমৃত্যুর ঘটনায় দেহ নিয়ে বেরোনোর সময় হুলস্থুল, বিক্ষোভ বাম-বিজেপির
মাতঙ্গিনী হাজরার নাম ১৯৪২ সালের আগস্ট আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু ৪২-এর আগস্ট আন্দোলন নয়, তার আগে থেকেই প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরা। লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন থেকে বিভিন্ন স্বদেশী আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান উল্লেখ্যযোগ্য। কখনও সরাসরি আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া আবার কখনও আন্দোলনের নেতাকর্মীদের প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করা। গান্ধিবুড়ি নামে খ্যাত এই মহিলা তমলুক তথা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার গর্ব।