বহরমপুর থেকে ঘণ্টা আড়াইয়ের রাস্তা ধুলিয়ান৷ ধুলিয়ান, জঙ্গিপুর, লালগোলা, ভগবানগোলা, রানিতলা, রানিনগর এবং জলঙ্গির মতো বিস্তীর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের অধিকাংশই হয় কৃষিজীবী না হয় মৎস্যজীবী। এ ছাড়া বাড়ির মহিলারাদের বিড়ি বাঁধাই৷ হাজার বিড়ি পিছু পারিশ্রমিক ১৫২ টাকা৷ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকাগুলিতে গঙ্গা ও পদ্মা, দুজনেই চোখ রাঙায়৷ বর্ষা তো বটেই৷ বছরের অন্যান্য সময়েও৷
advertisement
ধুলিয়ানের বাসিন্দা শেখ মহম্মদ মোমিনের কথায়, 'গঙ্গায় মাছ ধরি৷ বউ মেয়ে বিড়ি বাঁধাইয়ের কাজ করে৷ ছেলে-মেয়েদের ইস্কুলে পাটানোর টাকা নেই৷ কোনও রকমে সংসার চলে৷ ৩ বার বাসা বদলেছি৷ গঙ্গা সব খেইয়ে ল্যায়৷ জকুন-তকুন৷'
ধুলিয়ানে টোটো চালক রুবেল৷ বছর ২৮ বয়স৷ গঙ্গা লাগোয়া গ্রামেই বাড়ি৷ সীমান্ত থেকে খুব বেশি দূরে নয়৷ 'অধীরদাদা' কেন, কাউকেই আর বিশ্বাস করেন না৷ ভোট দিচ্ছেন এ বছর? সটান বলে দিলেন, 'না৷ দেব না৷ আমাদের গ্রামে একবারটি চলুন৷ বুঝবেন৷ ১৯৯৮ সালে শেষবার গঙ্গা ভাঙন রুখতে কাজ করা হয়েছিল৷ তারপর থেকে আর কিছু হয়নি৷ যে হারে ভাঙন চলছে, ঘরবাড়ি গেলে তো পথে বসব৷ ৯০ হাজার টাকা লোন নিয়ে এই টোটো কিনেছি৷ লোন চোকাবো না বাড়ি তৈরি করব?'
আর কয়েক মাস পরেই বর্ষা৷ মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় গঙ্গা ভাঙন নিয়ে কোনও সুরাহা হয়নি৷ সমাজকর্মী মেধা পাটেকর একাধিক বার ফারাক্কায় গিয়ে গঙ্গা ভাঙনে গৃহহীনদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন৷ সমাজকর্মীরা আসেন৷ রাজনীতিবিদরা আসেন৷ ভোট আসে৷ গঙ্গা ভাঙন নিজের গতিতেই চলছে৷
পেশায় মত্স্যজীবী শরিফুল শেখ বেশ রসিক মানুষ৷ রোগা, অথচ পেটানো চেহারার শরিফুল হাসতে হাসতে বলেন, 'আমাদের মাঝিদের একটা গান আছে৷ গঙ্গার ভাঙন নিয়ে৷' কী গান? 'নদীরে ও নদীরে, তুই একটু দয়া কর৷' হেসে উঠলেন বৃদ্ধ৷