#ডানলপ: হুগলি নদীর তীরে শ্রীরামপুর, চন্দননগর, চুঁচুড়ার মতো জনপদের পাশে ছিল একাধিক কারখান। পাট শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি, শোভা পেত দুই নাম। হিন্দমোটর ও ডানলপ। তবে সেই স্বর্ণযুগ গিয়েছে। ইতিহাস আশ্রিত হুগলি নদীর পারের এই শহরের এক সময় শিল্পেও যথেষ্ট নামডাক ছিল। যদিও সেই সমৃদ্ধির দিন আজ আর নেই। তবে বহুদিন পরে রাজনৈতিক ভাবেও হুগলি শিল্পাঞ্চল সরগরম। সপ্তাহের প্রথম তিন দিনেই মোদি-মমতার গ্র্যান্ড শো সেই শিল্পাঞ্চলের অন্যতম ফলক হিসাবে যে পরিচিত ছিল সেই ডানলপ টায়ার কারখানার মাঠে৷
advertisement
দেশের মধ্যে রবার শিল্পে এক সময়ের গর্ব ছিল হুগলির সাহাগঞ্জের এই কারখানা। কয়েক হাজার মানু্ষের জীবিকার নিরাপদ আশ্রয় ছিল এই কারখানা। শুধু দেশের মধ্যে নয়, বিদেশেও ছড়িয়ে গিয়েছিল এই খ্যাতি। যদিও এখন সেই কারখানা যেন মৃত্যুপুরী। গোটা কারখানা চত্বর জুড়ে আগাছা। মাঝে মধ্যে উঁকি দিচ্ছে কোয়ার্টার। যার দেওয়াল জুড়ে চওড়া ফাটল। ছাদ জুড়ে বুনো গাছ। বট গাছের শিকরে ভেঙে চৌচির সবুজ রঙা ঘর। হাজারো ধুলো মুছে ফেললে হয়তো দেখা যাবে ডানলপ লেখাটা। আর এখানেই ভাঙা চৌকাঠের ওপারে সভা করে গেলেন দেশের দুই রাজনীতিবিদ। যাঁদের পারস্পরিক রাজনৈতিক লড়াই এখন সর্বজন বিদিত। জং ধরা জানলার পাল্লা খুললেই ভেসে এসেছে আওয়াজ। এক সময় যে কোয়ার্টার গমগম করত সাইরেনের আওয়াজে এখন সেখানে রাজনীতির কথা। তবে বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের এখনও আশা দাদা-দিদি'দের আওয়াজে হয়তো খুলে যাবে কারখানার গেট। আবার হয়তো শুরু হয়ে যাবে কাজের ব্যস্ততা ।
‘‘আমি তো ২০১৬ সালে কারখানা অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিলাম। আমি বিধানসভায় তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রের তরফ থেকে কোনও সাহায্য মেলেনি। ৫ বছর হয়ে গেল কেন কেন্দ্র অনুমতি দিল না। প্রশ্ন করুন’’, বুধবারই সাহাগঞ্জের মাঠে সভা করে ডানলপ নিয়ে কেন্দ্রের অসহযোগিতার অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সভায় বাংলার শিল্পের করুণ অবস্থার কথা বললেও ডানলপ কারখানা আদৌ খোলার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে বন্ধ কারখানার ঘর আঁকড়ে বসে থাকা মানুষগুলো আজও আশাবাদী এ বার হয়তো ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। কোয়ার্টারের মাঝে বাস করেন আনিশা বিবি। একমাত্র মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। হাঁটা চলার সমস্যা। স্বামীর কাজ নেই বহু বছর। ছেলে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। স্বামীর প্রাপ্য মেলেনি আজও। তিনি অবশ্য এখনও হাল ছাড়তে নারাজ। আশায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর সভার পরে কারখানা খোলা নিয়ে নিশ্চিত কোনও সিদ্ধান্ত হবে।
একই রকম আশাবাদী কুন্তি মিশ্র। স্বামী বহুদিন ধরে শয্যাশায়ী। আগে কাজ করতেন মেন ইউনিটে। মেলেনি পিএফ-এর টাকা। তিনি জানাচ্ছেন, টাকা পাব। এ বার আশা করি কোনও সিদ্ধান্ত হবে। কুন্তি দেবী দু’টি সভাই শুনেছেন বাড়ির দোরগোড়ায় বসে। আর পাশের ঘরের মীনাক্ষীকে বলেছেন, ‘আচ্ছা দিন আয়েগা’। এখানকার শ্রমিক পরিবারগুলিকে সাহায্য করে রাজ্য সরকার। এমনটাই জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পালটা তিনি অভিযোগ করেছেন, ডানলপের মালিকের কলকাতার বাড়িতে বিজেপি নেতারা রাত কাটান। তাই ডানলপের শ্রমিকদের উচিত পবন রুইয়া আর বিজেপি যোগ নিয়ে পোস্টারিং করা। রাজনৈতিক লড়াই চলতে থাকলেও এখানের মানুষের চাহিদা একটাই, এখানকার দক্ষ শ্রমিক আর কাজের পরিবেশ, উদাহরণ ছিল অন্যদের কাছে, ফিরে আসুক সেই দিন।।