শিল্পনগরী হলদিয়া। হলদিয়া বন্দর ঘিরে হলদি নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে একের পর এক শিল্প কারখানা। এই হলদিয়ার এক প্রান্তে হলদি নদীর ধারে মুক্ত বাতাসে নতুনভাবে সেজে উঠেছে খোলা আকাশ। নিজের নামের মতই সুন্দর। প্রতিদিনকার ব্যস্ত জীবন থেকে মনকে ছবি দিতে চাইলে আসুন খোলা আকাশ রিসর্টে। কর্মজীবনের চাপে পরিবারের মানুষের সঙ্গে আলোচনা হতে থাকা সম্পর্ক পুনরায় এক সুরে বেঁধে নিতে খোলা আকাশ আদর্শ জায়গায়। শান্ত ধীর গতিতে বলছে টাকা হলদি নদী কে দেখতে দেখতে চাও পোকার কামড়ে সময় চুপিসারে পার হয়ে যায় এখানে। শান্তিনিকেতনের খোয়াই এর আদলে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা আছে বসার জায়গা। মাথায় খড়ের ছাউনি। চারপাশে গাছপালা তাতে পাখির ডাক। আপনার মন গেয়ে উঠবে \'আজ কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা\'।
advertisement
আসলে প্রকৃতি বরাবরই সুন্দর। আর তাতে যদি মানুষের শিল্পের ছোঁয়া থাকে তা হয়ে ওঠে আরও রূপসী। খোলা আকাশ চত্বরে আছে সেই শিল্পের ছোঁয়া। বাংলার শিল্প-সংস্কৃতিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে তুলে ধরা হয়েছে পর্যটকদের জন্য। পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য আছে বাউল শিল্পী। সম্মুখে বয়ে যাওয়া নদী, মাথার ওপর মুক্ত আকাশ আর বাউলের একতারায় দেহতত্ত্বের সুর। এই অপার্থিব চিত্রপটে পর্যটক ভাবের গভীরে পাড়ি দেবে অজানায়। রাতের খোলা আকাশ আরও রূপসী। আবার এই সবকিছুই রূপোলী চাঁদের মায়া ছড়ানো জ্যোৎস্না রাতে পর্যটকদের দিয়ে যাবে স্বর্গসুখ।
খোলা আকাশ রিসোর্টে সবকিছুর মধ্যেই আছে শৈল্পিক ছাপ। সে চারপাশে বিভিন্ন স্কাল্পচার হোক বা সুন্দর সাজানো-গোছানো ছিমছাম বেডরুম সবেতেই শিল্পের ছোঁয়া। আবার খাবার-দাবারে পোড়ামাটির কারুকার্য করা থালা বাটি। সব কিছুর মধ্যেই বাংলার বিভিন্ন এলাকার শিল্প-সংস্কৃতি একটা ছোঁয়া আছে। আর সব কিছুর স্বাদ পেতে হলে আসতেই হবে খোলা আকাশ রিসর্টে। জীবন বয়ে যাবে, থেমে থাকার নয়। কিন্তু একঘেয়েমিতায় জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সুন্দরের প্রতি অভিসার। হারিয়ে যাচ্ছে ভালোলাগার বিষয়গুলি। মন চাইছে মুক্তি পেতে। ভুলতে চাইছে দৈনন্দিনের কর্মব্যস্ত জীবন। মন চায় পরিবারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ। এই সবকিছু ফিরে পেতে আপনাকে আসতে হবে হলদিয়ার হলদি নদীর পাড়ে খোলা আকাশে।
কীভাবে আসবেন: হলদিয়া একটি শিল্প নগরী তাই রাজ্য সড়ক, জাতীয় সড়ক ও রেল পথ ধরে রেখেছে হলদিয়াকে। খোলা আকাশ রিসোর্টে আসার সবচেয়ে ভালো যোগাযোগব্যবস্থা সড়কপথে। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ব্রজলাল চক বাস স্টপেজ থেকে বালুঘাটা যাওয়ায় রাস্তায় তেরোপেখ্যা মোড় থেকে নদী পাড় বরাবর মিনিট এগোলেই খোলা আকাশ রিসোর্ট। পূর্ব মেদিনীপুরে প্রবেশপথ মেছাদা থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার দূরে খোলা আকাশ। এখানে আসার সবচেয়ে ভাল মাধ্যম হলো ছোট গাড়ি বা মোটরবাইক।
থাকা ও খাওয়া: খোলা আকাশ রিসোর্টে পাওয়া যায় ফ্যামিলি রুম ও কর্পোরেট রুম। রুম ভাড়া ২৫০০ - ৪০০০ টাকা। এছাড়া চাইলে এক বেলা কাটিয়ে আসা যায়। সেক্ষেত্রে রুম লাগে না। খোলা আকাশে খাওয়া-দাওয়ার আপ্যায়নে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। বাঙালি ভোজন রসিকদের কথা মাথায় রেখে পাওয়া পাওয়া যায় বিভিন্ন বাঙালি খাওয়া-দাওয়া। এদের বিভিন্ন থালি খুব ভালো। সুস্বাদু রান্না সুন্দর কারুকার্য করা পোড়ামাটির থালা-বাটি তে খাবার-দাবার পরিবেশন মন ভরিয়ে দেবে। এদের এবার পুজো উপলক্ষে চারদিন আলাদা আলাদা বাঙালি খাওয়া-দাওয়ার থালি পাওয়া যাবে। থাকা খাওয়ার জন্য আগে থেকেই বুকিং করতে হবে। তবে আর দেরি কেন! যোগাযোগ করুন ৬২৯৫৯৬৪৫৯৪ ।
সৈকত শী
আরও পড়ুন: ২৮৮ বছরের পুরনো ঐতিহ্যের পুজো বেনীপুরের বসু পরিবারে, এখনও একই উচ্ছ্বাস গ্রামে...