যাত্রাপথ :
মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কলকাতায় পাড়ি, একটি সংস্থার ট্যালেন্ট হান্ট থেকে সকলের নজরে পড়া, টালিগঞ্জে কোচ অটল দেববর্মনের বাড়িতে থেকে ক্রিকেট সাধনা। অশোক দিন্দার উত্থান বাংলার ক্রিকেটে রূপকথার মতো| বাংলার হয়ে খেলার পাশাপাশি নিজের বোলিং সাফল্যে জায়গা করে নিয়েছিলেন জাতীয় দলেও| আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্স ছাড়াও দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, পুণে ওয়ারিয়র্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের প্রতিনিধিত্ব করেছেন দিন্দা|
advertisement
ক্রিকেটের ময়দানের এই 'নৈছনপুর এক্সপ্রেস' আবার হনুমান’জির অন্ধ ভক্ত। হোয়াটস্যাপ ডিপিতেও সেই বজরংবলী। ছেলেবেলায় পিতৃহারা মায়ের হাতে গড়া ছেলের ঈশ্বরে ভক্তি অবশ্য প্রয়াত বাবার কাছ থেকে পাওয়া। ছোটবেলায় গ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পাড়ায় ঘুরে ঘুরে খোল নিয়ে কৃষ্ণনাম জপ করতেন বাবা। সঙ্গী হতেন ছোট্ট অশোক। কৃষ্ণযোগ সেই তখন থেকেই।
কিন্তু রাজনৈতিক ময়দানে এই অর্জুনের কৃষ্ণটি কে?
উত্তর পেতে সময় লাগে না। নাহ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নন, তাঁর ‘দাদা’ শুভেন্দু অধিকারী। ‘গুরু’-ও বটে। সেই দাদা তথা গুরুর ডাকে সাড়া দিয়েই রাজনীতিতে। গত কয়েক মাস ধরেই রাজ্য রাজনীতির দিকে নজর রাখছিলেন। ‘দাদা’র সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। ‘দাদা’ বিজেপি-তে যেতেই ক্রিকেটের ভাই ব্যাগ গোছাতে শুরু করেন। দাদার অনুগামী হয়েই পদ্মশিবিরে।
'কেন ময়নার মানুষ আপনাকেই বাছবেন?' 'আপনার ইউ এস পি-টা কী?'
নাম ঘোষণার পরেই কলকাতার বাড়ি ছেড়ে গ্রামের বাড়ির একান্নবর্তী পরিবারে ঘেষাঘেষি আর ঠাসাঠাসির জীবনে ফিরে আসা অশোক কিন্তু আত্মবিশ্বাসী। বিশ্বাসের জোর তাঁর সততায়। বললেন, "আমি নিজে সৎ। চেষ্টা করব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের জন্য কিছু করার। এর আগেও মানুষের জন্য অনেক কাজ করেছি। এবারেও তাঁর অন্যথা হবে না। নিজের রাজ্যকে সেরা জায়গায় দেখতে চাই।"
জীবন ও যাপন :
ক্রিকেটের পোশাক ছিল সাদা। ফ্ল্যানেলের ট্রাউজার্স আর অ্যাক্রিলিকের শার্ট। ওয়ান-ডে এবং টি-টোয়েন্টিতে রঙিন জার্সি। কিন্তু এখন পরনে গেরুয়া কুর্তা আর সাদা পাজামা। বিএমডব্লিউ, স্করপিও-সহ একাধিক গাড়ির মালিক। অবশ্য প্রচারের হুডখোলা জিপই আজ তাঁর নিত্যসঙ্গী। নৈছনপুরের বাড়ি থেকে রোজ সকাল ৬টায় বেরোচ্ছেন প্রচারে। দলের কাজ সেরে ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত ২টো।
বাইশ গজের যুদ্ধে সচিন তেন্ডুলকর, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলী, বীরেন্দ্র সেহবাগের সঙ্গে সাজঘরে সময় কাটিয়েছেন। তবে শিয়ালদহের কোলে মার্কেটের তস্য গলির মেসের বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আজও তাঁর সবচেয়ে প্রিয়। শুধুমাত্র মায়ের পরামর্শ মেনেই মুহূর্তে পাল্টে দেন মনোনয়ন পেশের দিন। আপাদমস্তক পারিবারিক মানুষ অশোকের ওয়ালেটে থাকে বৌ শ্রেয়সী, মেয়ে আর মায়ের ছবি। রেগুলার বাজার, প্রয়োজনে ব্যাঙ্কের লাইনেও দেখা যায় এই ছেলেকে।
ময়না বিধানসভা :
ময়নার ইতিহাস বলছে ১৯৫৭ ও ১৯৬২ সালে কংগ্রেসের অনঙ্গমোহন দাস ময়না আসন থেকে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৬৭, ১৯৬৯, ১৯৭১ ও ১৯৭২ সালে টানা চারবার সিপিআইয়ের কানাইলাল ভৌমিক এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বামপ্রার্থী দীপক বেরা তৃণমূল কংগ্রেসের ভূষণচন্দ্র দোলাইকে পরাজিত করেন। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইএমের শেখ মুজিবুর রহমান ২০৬ নম্বর ময়না কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রফুল্লকুমার বারাইকে পরাজিত করেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী সংগ্রামকুমার দলুই জয়ী হয়েছিলেন৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১০০,৯৮০৷ দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন কংগ্রেসের মানিক ভৌমিক৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ৮৮,৮৫৬৷ পূর্ব মেদিনীপুরের উত্তর হাওড়া জেলার এই বিধানসভা আসন তাই একদিকে যেমন তৃণমূলের তেমনই একসময়ের বামেদেরও।
এবারে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী গতবারের জয়ী সংগ্রামকুমার দলুই। অন্যদিকে, বাম-কংগ্রেস-ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) তরফে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেসের মানিক ভৌমিক। আর বিজেপির তুরুপের তাস প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক দিন্দা। একসময়ে বহু ম্যাচে তাঁর বোলিং দাপটে জিতেছে বাংলা| এবার কী মোদি ম্যাজিকে ভর করে ময়নার মানুষের মন জিতে ইতিহাস গড়তে পারবেন ? উত্তর দেবে সময়।