তবু প্রকৃতি-মা নিরলস তার কাজে, তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় । আজও গাছের শিকড়ে ভূমিক্ষয় আটকে, নদীর বুকে বন্যাকে ধারণ করে, ম্যানগ্রোভের আড়ালে সাইক্লোনকে যথাসাধ্য লুকিয়ে ফেলে ছায়া দিয়ে যাচ্ছে আমাদের । সম্প্রতি সুপার সাইক্লোন ‘আমফান’-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছে আমাদের । সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ না থাকলে কোন ধ্বংসলীলা চাক্ষুস করতে হত মানবজাতিকে । ১৮০-১৮৫ কিমি গতিতে সুন্দরবনে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড় বেগ কমিয়ে নেমে এল ১২০-১৩০-এ । কিন্তু সেই ম্যানগ্রোভই আজ বিপর্যয়ের মুখোমুখি । পরিবেশবিদরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের অতন্ত্র প্রহরী ম্যানগ্রোভ ।
advertisement
কারণ? কারণটা অবশ্যই আমরা নিজেরাই । আমরাই অতিরিক্ত মাত্রায় এসি, ফ্রিজ ব্যবহার করেছি, ফুটো করে দিয়েছি পৃথিবীর রক্ষক ওজন স্তরকে । যে স্তর অতিবেগুনি রশ্মিকে আটকে দেয় । আমরাই গ্রিন হাউজ এফেক্ট তৈরি করেছি । গরম হয়ে গিয়েছে এই সৌরমণ্ডলের একমাত্র বাসযোগ্য এই গ্রহ । বরফ গলেছে হিমবাহের । জলস্তর বেড়েই চলেছে একটু একটু করে । আর সমুদ্রের সেই বেড়ে যাওয়া জলস্তরই অসনী সংকেত দিচ্ছে ম্যানগ্রোভকে ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন প্রতি বছর সমুদ্রের জলস্তর ৩.৫-৪ মিলি মিটার করে বাড়ছে । সেটা যদি বছরে ৬ মিলি মিটারের কাছাকাছি চলে আসে তা হলেই বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করবে ম্যানগ্রোভের । কারণ ওই পরিমাণ জলের মধ্যে নতুন গাছ আর জন্ম নিতে পারবে না ।
ম্যানগ্রোভকে সারা পৃথিবীর উপকূলের রক্ষাকর্তা বলা হয় । পাশাপাশি, জৈব বৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও এর অবদান অসামান্য । বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, যদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কার্বোন নির্গমনে এখনই লাগাম না টানা যায় তা হলে অনেকটা দেরি হয়ে যাবে । তখন আর কিছুই করার থাকবে না ।