বিচারক বিনয় কুমার পাঠক শনিবার সাজা ঘোষণা করেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২১, ১২১(ক), ১২২ সহ ১৫টি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ধৃত জঙ্গির বিরুদ্ধে। দোষীকে ফাঁসির সাজা দেওয়ার পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
২০০৭ সালে পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে শেখ সমীর ওরফে আবদুল নঈমকে আরও তিন লস্কর জঙ্গি মহম্মদ ইউনুস (৬০), আবদুল্লা (৩৪), মুজফ্ফর আহমেদ রাঠের সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তখনই শেখ সমীরের কলকাতার ডেরা মদন মোহন বর্মন রোডের একটি বাড়ি থেকে নাইট্রো গ্লিসারিন উদ্ধার করে পুলিস। এই রাসায়নিক দিয়ে সাধারণত বিস্ফোরক তৈরি করা হয়ে থাকে। হায়দরাবাদের মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ কান্ডে জড়িত থাকার পাশাপাশি শেখ সমীর মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনে বিস্ফোরণের ঘটনাতেও জড়িত ছিল। এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার ছকও কষছিল তারা। সেকারণে পাতিয়ালা হাউস কোর্টে তার বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে।
advertisement
মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের বাসিন্দা লস্কর জঙ্গি শেখ সমীর আদতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। ২০০৫ সালে সৌদি আরবের লস্কর জঙ্গি আমজাদের সংস্পর্শে এসেছিল সে। তখন থেকেই জঙ্গি মানসিকতা গড়ে ওঠে। লস্করের হাইকমান্ডের নির্দেশেই ভারতে নাশকতা চালানোর জন্য লস্কর জঙ্গিদের বিস্ফোরক সরবরাহ এবং জাল ভারতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করে দেওয়ার কাজ ছিল তার। সেইমত পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছিল সে। হায়দরাবাদ বিস্ফোরণ এবং মুম্বই লোকালে বিস্ফোরণের আগে একাধিক লস্কর জঙ্গির জাল ভারতীয় ভোটার কার্ড এবং রেশন কার্ড তৈরি করে দিয়েছিল শেখ সমীর। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে চোরাপথে লস্কর জঙ্গিদের ভারতে ঢোকাতে গিয়েই পেট্রাপোল সীমান্তে ২০০৭ সালের চার এপ্রিল ধরা পড়েছিল সে।
তখন থেকেই বনগাঁ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহীতার অপরাধে একাধিক মামলা চলছিল। মুম্বই নিয়ে যাওয়ার পথে ২০১৪ সালে পুলিসের চোখে ধুলো দিয়ে ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায় শেখ সমীর। তখনই তার মা মুম্বই আদালতে হেভিয়াস কর্পাস মামলা করে অভিযোগ করেছিল পুলিস তার ছেলেকে গুম করেছে। এরপর ২০১৭ সালে দিল্লিতে এনআইএর হাতে ফের ধরা পড়ে শেখ সমীর। সেখান থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বনগাঁ মহকুমা আদালতের ফার্স্ট ট্র্যাক ওয়ান আদালতে নতুন করে মামলা করা হয় এই লস্কর জঙ্গির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের পেট্রাপোল সীমান্তে আরও যে তিন জঙ্গির সঙ্গে প্রথমে ধরা পড়েছিল সে তাদেরও ফাঁসির সাজা দিয়েছে আদালত। যদিও নিজের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে শেখ সমীর। বনগাঁ মহকুমা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চতর আদালতে যাবে বলে এদিন কোর্ট চত্ত্বরে সাংবাদিকদের জানিয়েছে ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত লস্কর জঙ্গি শেখ সমীর।