ধর্মীয় ভক্তি, ঐতিহাসিক গৌরব আর সামাজিক আবেগ—এই ত্রিমূর্তি যেন জড়িয়ে রয়েছে মহিষাদলের এই রথযাত্রায়। আজ দুপুরে মহিষাদলের রাজবাড়ি চত্বর থেকে বিশাল কাঠের সেই ঐতিহ্যবাহী রথটি টানতে শুরু করেন ভক্তরা। চেনা ছন্দে নারকেল ভাঙা, সোনার ঝাড়ু দিয়ে পথে ঝাঁট দেওয়া, আর রথের চাকায় শুভারম্ভের ঢাক—সব মিলিয়ে এক কথায়, চোখে জল আনা দৃশ্য।
advertisement
এক কালে রাজবাড়ি ও দেওয়ানবাড়ির ব্যবস্থাপনায় চারটি ভিন্ন রথ বেরোত মহিষাদলে। কেউ রথ টানত আষাঢ়ে পূর্ণিমায়, কেউ বিজয়া দশমীতে। আজ সেই ঐতিহ্যবাহী রাজরথ হয়তো জনগণের হাতেই — কিন্তু নিয়ম, রীতি, পবিত্রতা রয়ে গেছে অটুট।
আজও রথ টানার আগে রাজপরিবারের বংশধর শঙ্করপ্রসাদ গর্গ ও হরপ্রসাদ গর্গ উপস্থিত ছিলেন, তদারকি করলেন পুরনো আচারবিধি। মদনগোপালজিউর নামে পরিচিত এই কুলদেবতার রথের আশীর্বাদ নিতে রীতিমতো ভিড় জমে গোটা এলাকা জুড়ে।
১৭৭৬ সালে রানি জানকীদেবীর সময় রথ তৈরির পরিকল্পনা হয়। ১৮০৪ সালে শুরু হয় এই রাজরথ উৎসব। সেই থেকে আজও ঐতিহ্য মেনে প্রতিবারই টানা হয় এই রথ। ছয়তলা বাড়ির সমান উঁচু এই কাঠের রথের মূল কাঠামো আজও অক্ষত।
চাকার উচ্চতা একসময় ছিল সাড়ে পাঁচ ফুট, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে চার ফুটে। রথের সবচেয়ে বিশেষত্ব — এটি স্পোকবিহীন (spokeless) ও সম্পূর্ণ নিরেট কাঠের তৈরি। এবছর তৈরি হয়েছে নতুন ছয়টি চাকা, যা দু’শো বছরের পুরনো নিমকাঠ দিয়ে তৈরি। এমন কাঠামো যে এখনও সচল — এ যেন কালের অলৌকিকতা।
রথ মানেই শুধু টান নয়, চারপাশে গড়ে ওঠে উৎসবের আসর। মহিষাদলের রাজবাড়ির রথ উপলক্ষে বসেছে জমজমাট মেলা। হস্তশিল্প, খাবারের স্টল, নাগরদোলা — গন্ধে আর শব্দে যেন ফিরে যাওয়া কোনও শৌর্যবান অতীতে।
ভোর থেকে শুরু করে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে অবধি থামেনি ভিড়। আবালবৃদ্ধবনিতা, ভক্ত আর পর্যটক মিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ আজ সাক্ষী রইল ইতিহাসের এই গতিশীল