পূর্ব বর্ধমানের নবাবহাট অঞ্চলে অবস্থিত রাজ আমলের তৈরি একশো আট শিব মন্দির। আজ থেকে ২০০ বছরেরও বেশি আগে বর্ধমানের রাজমহিষী, রাজা তিলকচাঁদের পত্নী বিষ্ণুকুমারীর সাধ হয়েছিল শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করার। শোনা যায় ‘দশনামী' শৈব সম্প্রদায় ছিল তাঁর মূল অনুপ্রেরণা। সেই ইতিহাসের সাক্ষী এই অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শন একশো আট শিবমন্দির।
বর্ধমান রাজপরিবারের উল্লেখযোগ্য দুই কীর্তি হল কালনার গঙ্গাতীরে একশো আট শিবমন্দির আর নবাবহাটের এই একশো আট শিবমন্দির। ৭১০ শকাব্দে বা ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে এই মন্দিরগুলি নির্মিত হয়েছিল। ১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়ে ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে এই নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই মন্দির বিষ্ণুকুমারীর পরিকল্পনার ফসল। তাঁর ইচ্ছে ছিল তিনি জপমালার আদলে মন্দির নির্মাণ করবেন। জপমালায় যেমন ১০৮টি পুঁথি থাকে এবং থাকে অতিরিক্ত পুঁথি বা মেরু, তেমনই এই মন্দির। বালেশ্বরের মন্দিরের আটচালার নকশার অনুকরণে নবাবহাটের ১০৮ শিবমন্দির তৈরি করা হয়েছে।
advertisement
প্রতিটি মন্দিরের আয়তন ১০ বাই ১০ এবং উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। একই রীতিতে নির্মিত মন্দিরগুলি।এই আয়তাকার মন্দিরে প্রবেশের দরজা পশ্চিম দিকে, পূর্ব দিকের কিছু দূরে আয়তক্ষেত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করা ১টি ছোট অর্থাৎ ১০৯তম মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল মেরুকে প্রদক্ষিণ করার জন্য। আয়তক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে বাগান, দুটি প্রশস্ত সরোবর।
জনশ্রুতি, মহারানি বিষ্ণুকুমারী স্বপ্ন দেখেন একটি রমণীয় স্থানে বহু মন্দিরের সমাবেশ। সেখানে তিনি শিবপুজো করছেন। সেই স্বপ্নে দেখা মন্দিরকেই তিনি নবাবহাটে শ্রীকান্ত তর্কালঙ্কার শ্লোক অনুযায়ী ১০৯টি শিব মন্দির স্থাপন করে সেখানে লক্ষাধিক ব্রাহ্মণকে সমবেত করেছিলেন। মহারানি বিষ্ণুকুমারী বিশ্বাস করতেন, প্রথম মন্দির থেকে শেষ মন্দির পর্যন্ত পরিক্রমা করলে, তা ১০৮ বার মন্ত্র উচ্চারণ করার চেয়ে বেশি ফলদায়ক। এখানে প্রতিবছর শিব চতুর্দশীতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে পুজো ও উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
এই ১০৯তম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার সময় সেখানে লক্ষ সাধুর উপস্থিতি ঘটেছিল। তাঁদের পদধূলি রাজপরিবার একটি সোনার কলসিতে সংরক্ষণ করে রেখেছিল। সব মন্দিরেই রয়েছে কষ্টিপাথরের গৌরীপট্ট-সহ শিবলিঙ্গ। প্রতিষ্ঠার সময়ে সবগুলি মন্দিরের সামনেই একটি করে বেল গাছ রোপন করা হয়েছিল।