মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরের গোকুলপুর গ্রামে বাকসিদ্ধ বৈষ্ণব শ্রী শ্রী গোকুলানন্দ গোস্বামী বৈষ্ণবচার্যরূপের সমাধি মন্দির রয়েছে। বয়স্কদের কথায়, গোকুলানন্দ সবং-এর কোলন্দা গ্রামের নামকরা জমিদার পরমানন্দ ভুঁইঞার ভান্ডারি ছিলেন। বেশিরভাগ সময়ই সাধন ভজনে ব্যস্ত থাকতেন। গোকুলানন্দ গোস্বামী পৌষ সংক্রান্তিতে রাত ১২টা নাগাদ নদীর মাঝখানে, তাঁর যোগমঞ্চে সাধনা করতে করতে সমাধিপ্রাপ্ত হন। গোকুলানন্দ গোস্বামীর দেহত্যাগের পরবর্তী বছর থেকে শুরু হয় এই তুলসী চারার মেলা।সেই থেকেই পৌষ সংক্রান্তির ভোরে পুণ্যস্নান করে গোকুলানন্দ গোস্বামীর তুলসী মঞ্চে কেলেঘাই নদী থেকে তিন মুঠো মাটি তুলে দান করেন।
advertisement
দুই মেদিনীপুরের হাজার হাজার মানুষ তুলসি মঞ্চে মাটি দিয়ে পুজো নিবেদন করেন। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার এই প্রাচীন মেলা চলতি বছর ৫৩০ বছরে পড়ল। এই মেলার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল গ্রামীণ হস্তশিল্পের প্রসার দেখতে পাওয়া যায়। তুলসি চারার মেলা, পশ্চিম এবং পূর্ব মেদিনীপুরের সীমানা লাগোয়া অঞ্চলে এই মেলা বসে। স্থানীয় মানুষের কাছে এ এক ব্যস্ততার সময়। হরেক রকম পণ্যের হরেক রকম দোকান। সবং এবং পটাশপুরের মানুষের হৃদয়ের মিলনের মেলা এই মেলা। প্রায় ১৩-১৪ একর জায়গা জুড়ে এই মেলা বসে। পটাশপুরের গোকুলপুর গ্রামে নদী পাড়ে আছে সেই তুলসি মঞ্চ৷ যাকে কেন্দ্র করে এই মেলা। সেটির উচ্চতা এখন একটি দোতলা বাড়ির সমান। নানা ধরনের তুলো এবং বৈষ্ণবদের খোল (মৃদঙ্গ) কেনাবেচার জন্য মেলাটি বিখ্যাত। সবং-পটাশপুরের মাদুর, অমর্ষি এবং বাগমারির শঙ্খ, মাটির হাঁড়ি-কলসি, স্টিল-অ্যালুমিনিয়াম এবং পিতল-কাঁসার বাসনপত্র পাওয়া যায়।
কেলেঘাই নদীতে ডুব দিয়ে মাটি তুলে তুলসি মঞ্চে দিয়ে পুজো নিবেদন করে। মাটি জমতে জমতে জায়গাটি একটি ছোট টিলার আকার ধারণ করেছে। নদীর ঘোলা জলে ডুব দিয়ে ভেজা কাপড়ে মাটি দিতে দিতে পথটি ভীষণ ভাবে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। তখন প্রায় দোতলার সমান উঁচু সমাধির শিখরে পৌঁছানো বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। রীতিমতো পিছলে পড়ে, আছাড় খেতে খেতে পুণ্যার্থীরা সমাধি চূড়ায় উঠে মাটি দেবার প্রচেষ্টা সত্যিই দেখার মতো বিষয়। কম বয়সি ছেলেপুলের দল চূড়ায় পৌঁছতে পারলেও বয়স্করা পারেন না। তারা সমাধির গোড়ায় মাটি দেন।
সৈকত শী