ক্ষুদিরাম বসুর দিদি অপরূপা রায়ের ঘাটালের দাসপুরের এই বাড়িটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। এই বাড়িতেই ক্ষুদিরামের দিদি অপরূপা দেবী এবং তাঁর স্বামী অমৃতলাল রায় বসবাস করতেন। অমৃতলাল রায় ক্ষুদিরামকে বিপ্লবী জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে উৎসাহিত করেন এবং তাঁকে তমলুকের হ্যামিল্টন হাই স্কুলে ভর্তি করে দেন। পরবর্তীতে ক্ষুদিরাম মেদিনীপুরে চলে আসেন এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। ক্ষুদিরাম বসুর জীবনে অপরূপা দেবী এবং অমৃতলাল রায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাঁরা ক্ষুদিরামকে স্নেহ ও সমর্থন প্রদান করেন, যা তাঁর বিপ্লবী জীবনে প্রেরণা জোগায়।
advertisement
ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কাছাকাছি কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী গ্রামের একটি বাঙালি কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার। তার মা’র নাম লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। তিন কন্যার পর তিনি তার মায়ের চতুর্থ সন্তান। তার দুই পুত্র অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অপর পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তার পুত্রকে তার বড় দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের অর্থাৎ চালের খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে শিশুটির নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা হয়। ক্ষুদিরামের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর তখন তিনি তার মাকে হারান। এক বছর পর তার পিতার মৃত্যু হয়। তখন তার বড় দিদি অপরূপা তাকে দাসপুর থানার অন্তর্গত এক গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
মেদিনীপুরে তার বিপ্লবী জীবনের অভিষেক। তিনি বিপ্লবীদের একটি নবগঠিত আখড়ায় যোগ দেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসু এবং রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে মেদিনীপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠন গড়ে উঠেছিল। সেই সংগঠনের নেতা ছিলেন হেমচন্দ্র দাস কানুনগো এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন হেমচন্দ্র দাসের সহকারী। এটি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্রিটিশবিরোধীদের দ্বারা পরিচালিত হত। তিনি বিপ্লবী রাজনৈতিক দল যুগান্তরে যোগ দেন। একের পর এক বোমা হামলার দায়ে তিন বছর পর তাঁকে আটক করা হয়। ৩০ এপ্রিল ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে মুজাফফরপুর, বিহারে রাতে সাড়ে আটটায় ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে বোমা ছুঁড়ে তিনজনকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হয় ২১ মে ১৯০৮ তারিখে যা আলিপুর বোমা মামলা নামে পরিচিত হয়।
বিচারক ছিলেন জনৈক ব্রিটিশ মি. কর্নডফ এবং দুজন ভারতীয়, লাথুনিপ্রসাদ ও জানকীপ্রসাদ। রায় শোনার পরে ক্ষুদিরামের মুখে হাসি দেখা যায়। হাসতে হাসতে দেশের জন্য প্রাণ দেন তিনি। দেশের মানুষের কাছে আজও তিনি চিরস্মরণীয় ব্যাক্তিত্ব।তাঁর আত্মবলিদান সকলের কাছে অনুপ্রেরণা। আজও দেশবাসী নতমস্তকে প্রণাম জানায়। ঘাটালের এই বাড়িটি আজও ক্ষুদিরাম বসুর স্মৃতির সঙ্গে জড়িত। যদিও বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায় না, তবে এটি ক্ষুদিরাম বসুর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত।





