চুঁচুড়া, কাটোয়া, বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলের কার্তিক পুজোর খ্যাতি সুপ্রাচীন। তার মধ্যে কাটোয়ার ন্যাংটো কার্তিকের পুজো আর এখানকার কার্তিকের লড়াই নিয়ে সমগ্র বাঙালির মধ্যেই উন্মাদনা দেখা যায়। পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়ার এই বিখ্যাত ঐতিহ্যবাহী পুজোর সঙ্গে জুড়ে আছে মৌর্য যুগের ইতিহাস।
আরও পড়ুন- South 24 Parganas News: মাদুলি কেনার নামে সোনার দোকানে ঢুকে ভয়ঙ্কর কাণ্ড নরেন্দ্রপুরে, দেখুন
advertisement
প্রাচীনকাল থেকেই বাংলায় হেমন্তকালে কার্তিক পূজার প্রচলন হয়ে আসছে। এই হেমন্তকালে পূজিত কার্তিক আসলে বাংলার কৃষি সভ্যতার ও উর্বরতার দেবতা ছিলেন।
গবেষকরা বলছেন, অগ্রহায়ন মাসে যে নবান্ন হয় তারও প্রধান দেবতা ছিলেন কার্তিক। ঠিক এই কারণেই গঙ্গা তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে কৃষি প্রাধান্যের কারণে কাটোয়া, বাঁশবেড়িয়া অঞ্চলে কার্তিকের পূজার প্রচলন হয়।
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো, বারাসাতের কালীপুজোর মতোই বিখ্যাত হয়ে ওঠে কাটোয়ার কার্তিক পুজো। মূলত একে ন্যাংটো কার্তিকের পুজো বলা হয়। এখানে কার্তিকের নাম ‘খোকা’। সাধারণ মানুষ কার্তিককে তাঁদের পুত্র হিসেবে কল্পনা করে পুত্রসন্তান লাভের উদ্দেশ্যেই তাঁর আরাধনা করে থাকে।
কাটোয়ার এই কার্তিক পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আখ্যান। জনপদের সুবিধার কারণে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি আসতে থাকে কাটোয়া জুড়ে। আমদানি ও রপ্তানির জন্য ভাগীরথী নদী ও অজয় নদের তীরে এই বন্দরের গুরুত্ব ক্রমেই বাড়তে থাকে। স্টিমারে করে ভাগীরথী দিয়ে কাটোয়া থেকে রপ্তানি হতে লাগলো কাঁসা-পিতলের বাসনপত্র। তেমনই আমদানি হতো লবণ আর রান্নার মশলা।
বিভিন্ন জায়গা থেকে বণিকেরা এই বন্দরে এসে উঠতেন বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। আর বণিকদের আসার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের আমোদ-প্রমোদের জন্য একে একে তৈরি হতে থাকল বিভিন্ন বাড়ি, খাবার জায়গা আর সবশেষে গণিকাপল্লি।
আরও পড়ুন- Bjp Mla: চাকরি দুর্নীতির তদন্তে নিশানায় বিজেপি নেতার মেয়ে, বাড়িতে গেল সিআইডি!
সেকালে কাটোয়ার নিচুবাজার, বড়ো বাজার, খড়ের বাজার অঞ্চলে বাবুরা, মহাজনেরা রক্ষিতা রাখতো।শুধু মহাজনেরাই নয়, বড়ো বড়ো বজরার মালিকরাও এই নিষিদ্ধপল্লিতে আসতে শুরু করেন। বর্গী আক্রমণের সময় কাটোয়া ও তার আশেপাশের অঞ্চলের বহু নারী বর্গীদের মাধ্যমে ধর্ষিত হয়ে এই নিষিদ্ধপল্লিতে চলে আসে।
এইসব রক্ষিতা ও গণিকারা একটা অবলম্বন খুঁজতে বাবুদের কাছে সন্তানলাভের প্রার্থনা জানাত। তৎকালীন সমাজে গণিকাদের সন্তানদের কোনও স্বীকৃতি ছিল না। তাই বাবু মহাজনেরা এই গণিকাপল্লিতে কার্তিক পুজোর প্রচলন করেছিলেন। কার্তিককে পুরাণে প্রজননের দেবতা হিসেবেই কল্পনা করা হয়। এভাবেই কাটোয়ার ন্যাংটো কার্তিক বা খোকা কার্তিকের পুজো শুরু হয়।