কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, " পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরে জনসভায় যাওয়ার পথেই শুনলাম রাস্তার কাছেই গ্রামের মধ্যে কপালকুণ্ডলা মন্দির।কানে বেজে উঠল," পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছো?" সভায় যেতে দেরি হয়ে যাবে বলে যাওয়ার পথে দাঁড়াইনি। ফেরার পথে পড়ন্ত বিকেলে প্রত্যন্ত গ্রাম দরিয়াপুরে দাঁড়িয়ে পড়লাম। এখানে মন্দির? ক'জন বললেন, হ্যাঁ, একটু ভিতরে। অতঃপর হাঁটা। আমি, ঋতব্রত। সামনেই মোড়ে বঙ্কিমবাবুর মূর্তি। এটিই কপালকুণ্ডলার ভাবনাস্থল। গ্রামবাসীরা এগিয়ে এলেন, আন্তরিক তাঁরা। কিছুটা হাঁটার পর বাঁহাতে সেই কাপালিকের মন্দির, কপালকুণ্ডলার বাসস্থান। আজকের দিনেও গা ছমছমে ভাব। কিছু বাড়ি, কিছু জঙ্গলের মাঝে এ এক নিঝুমপুরী। কাঠামোটা বসে যাচ্ছে। আগে চণ্ডীমূর্তি ছিল, এখন নেই, আবার আসবে। বৃদ্ধ ভূদেব জানা কপালকুন্ডলার বাড়ি আগলে রাখেন। গাইডের মতো ঘুরিয়ে দেখালেন-" ওই যে ওইখানে নবকুমারকে বেঁধে রাখা হয়েছিল, আর ওই যে দরজা, নবকুমারকে নিয়ে কপালকুণ্ডলা পালিয়েছিলেন ওদিক দিয়ে।" ভরসন্ধের কমে আসা আলোয় যেন জীবন্ত কাহিনি। ততক্ষণে গ্রামবাসীরা বাইরে অনেকেই অপেক্ষায়। কথা হল।'
advertisement
আরও পড়ুন: বড়দিনের ছুটিতে ভিড় এড়াতে দিঘার কাছেই এই জায়গায় আসুন...
বঙ্কিমবাবু ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি কালেক্টর থাকাকালীন একটি খুনের মামলার তদন্তে এসেছিলেন। সামনের একটি বাড়িতে থাকতেন। ওই সময় এখান থেকে জলের স্রোত ছিল কাছেই। শব্দ শোনা যেত। এক কাপালিক বা তান্ত্রিকের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর। এবং এক শ্বেতবসনা মহিলা বঙ্কিমবাবুর সঙ্গে দেখা করতে যান, এঁর বিস্তারিত পরিচয় জানা যায় না।
কুণালবাবু বলেন, 'এর পরেই লেখকের কল্পনাশক্তি মিশে উত্তর কাঁথির এই দরিয়াপুর ঘিরেই কপালকুণ্ডলার ভাবনা। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের প্রথম সম্পূর্ণ রোমান্টিক ইতিহাস। এটিকে ঘিরে হেরিটেজ তকমাজনিত আরও বেশি কাজ দরকার। সামনের রাস্তাটি সারাতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহলকে বলেছি। তাঁরা সাড়া দিচ্ছে। এবং শুনলাম বরাবরের মতো এবারও কপালকুণ্ডলার প্রাঙ্গণকে ঘিরে বঙ্কিমমেলা হবে। প্রচারের আলো থেকে দূরে এলাকাবাসীর এক ধারাবাহিক শ্রদ্ধার্ঘ্য। আবার যাওয়ার ইচ্ছে থাকল।"