জানা গিয়েছে, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর চেন্নাই থেকে প্রায় দশ কোটি টাকার আইফোন নিয়ে কলকাতায় রওনা দেয় ওই ট্রাকটি৷ সবমিলিয়ে ট্রাকে থাকা আইফোনের মূল্য ছিল ৯ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা৷ ট্রাকে আইফোন ছাড়াও অন্যান্য দামি ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম ছিল৷ ওই ট্রাক বা লরির গতিবিধির উপর নজরদারি চালাতে অত্যাধুনিক ‘জিপিএস সিস্টেম’ ব্যবহার করে পরিবহণ সংস্থাটি। ফলে লরিটি ৫ মিনিটের বেশি কোথাও দাঁড়ালেই সতর্কবার্তা পৌঁছে যাবে পরিবহণ সংস্থার অফিসে! সেই মুহূর্তে অফিস থেকে গাড়ির চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তাঁকে গাড়ির অবস্থান ব্যাখ্যা করতে হবে অফিসকে।
advertisement
অভিযোগ, লরিটি রওনা হওয়ার পরের দিন তিনটি রাজ্য পেরিয়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে। অফিস জানতে পারে, ওই বছর ২৮ সেপ্টেম্বর ভোর ৬টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার (নতুনবাজার এলাকার) একটি পেট্রল পাম্পে লরিটি ৫ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখনই চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু, লরির চালককে বার বার ফোন করা হলেও তিনি তোলেননি। এই অবস্থায় ৪৫ মিনিট পরে ডেবরা থানায় খবর দেওয়া হয় পরিবহণ সংস্থার তরফে। ঘটনাস্থলে গিয়ে লরিটি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ গিয়ে দেখে লরিটি ফাঁকা। গাড়িতে কোনও আইফোন নেই! এমন কি, সেখানে চালক, খালাসি কাউকেই দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: রাম মন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠান বয়কট কংগ্রেসের, অযোধ্যায় যাবেন না সনিয়া-অধীররা
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে ওই পরিবহণ সংস্থার আইনজীবী-র সওয়াল, অনুমান করা হচ্ছে চলন্ত অবস্থাতেই ওই লরি থেকে আইফোনগুলি চুরি করা হয়েছে। কারণ, তার আগে গাড়িটি কোথাও দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে পড়েনি। এ রাজ্যে ঢোকার পরে ওই লরির পাশাপাশি আরেকটি লরি চলে আসে! দু’টি গাড়ি দীর্ঘক্ষণ একই গতিতে পাশাপাশি এগিয়ে চলে। ওই অবস্থাতেই ফোনগুলি লুট করা হয়ে থাকতে পারে। ওই কাজটি ডেবরার টোলপ্লাজার আগে সম্পূর্ণ করা হয়েছে, যাতে টোলপ্লাজায় গাড়িগুলির যোগসাজশ শনাক্ত করা না যায়। আর ফোন লুটের এই চিত্রনাট্যের সঙ্গেই বলিউডের সিনেমা ‘ধুম’-র যেন কোথাও একটা মিল খুঁজে পাচ্ছেন আইনজীবী থেকে পুলিশ অফিসাররা!
এরপর, পরিকল্পনামাফিক টোলপ্লাজা পার হওয়ার পরে গাড়িটি একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে ফেলে রেখে চালক, খালাসি চম্পট দেয়! ওই আইনজীবীর দাবি, লুটের পরে ফোনগুলি যাতে কালোবাজারে না যায় বার বার পুলিশকে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। তারা তা করতে পারেনি। এমন কি, প্রথমে পুলিশ এফআইআর পর্যন্ত নেয়নি। পরে গত ১০ অক্টোবর ওই ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর পরই, কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ওই পরিবহণ সংস্থা। বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত নির্দেশ দেন, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে ঘটনাটির ভাল ভাবে তদন্ত করতে হবে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত রিপোর্ট কলকাতা হাইকোর্টে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি।
এই চুরির ঘটনা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে এবং ভিন রাজ্যেও তদন্তকারী দল গিয়েছে।