সাধারণ জীবনযাপন করলেও তাঁর চিন্তাভাবনা ছিল অসাধারণ। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল সমাজের জন্য কিছু করার। বিশেষ করে শিক্ষার প্রসারে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তবে জীবনের নানা বাধা ও পরিস্থিতির কারণে সেই ইচ্ছা তখন বাস্তবায়িত হয়নি। তবুও মন থেকে মানবসেবার ভাবনা কখনও মুছে যায়নি। অবশেষে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজের সমস্ত সঞ্চয় সমাজের কল্যাণে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
advertisement
এলাকার শিক্ষার উন্নতির জন্য নিজের জমি দান করে স্কুল তৈরির পথ খুলে দিলেন মানসবাবু। তাঁর দেওয়া জমিতেই রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের উদ্যোগে গড়ে উঠছে একটি স্কুল। এই স্কুলটি পুরোপুরি অলাভজনক। শুধুমাত্র শিক্ষার প্রসারই যার একমাত্র লক্ষ্য। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গ্রামের দরিদ্র ও সাধারণ পরিবারের ছেলে-মেয়েরাই এখানে শিক্ষার সুযোগ পাবে। মানসবাবু শুধু জমিই দেননি। স্কুল তৈরির জন্য নিজের সারা জীবনের জমানো অর্থও বিলিয়ে দিয়েছেন। নিজের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার কথাও ভাবেননি একবারের জন্য। তাঁর কাছে মানবসেবাই ছিল সবচেয়ে বড় সঞ্চয়।
মানসবাবুর কথায়, “এই স্কুল থেকে যখন কেউ প্রতিষ্ঠিত হবে, তখনই আমার জীবন সার্থক হবে।” এলাকার ছেলেমেয়েরা সুশিক্ষিত হলে তবেই তাঁর স্বপ্ন পূরণ হবে। তিনি মনে করেন, মানুষের জন্য কাজ করাই আসল কাজ। নিজের জন্য কিছু রেখে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সমাজের জন্য কিছু করতে পারলেই জীবনের সাফল্য। জীবনের সমস্ত পরিশ্রম আর উপার্জন তিনি এই স্কুল তৈরিতে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর চোখে ভবিষ্যতের ভারত গড়ে উঠবে শিক্ষিত প্রজন্মের হাত ধরেই। এই বিশ্বাস থেকেই তিনি নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিয়েছেন।
স্থানীয়দের কথায়, আজ মানস কুমার মহাপাত্র শুধু একটি নাম নয়। তিনি এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা। তাঁর এই ত্যাগ ও মানবসেবার মানসিকতা সমাজকে নতুন দিশা দেখাচ্ছে। যদি সমাজের আরও মানুষ এইভাবে মানবসেবায় এগিয়ে আসেন, তবে সমাজ বদলাতে বেশি সময় লাগবে না। তখন মনীষীদের কল্পনার আদর্শ সমাজ বাস্তবে রূপ নেবে। শিক্ষা, মানবতা ও সহমর্মিতার ভিতের উপর গড়ে উঠবে নতুন ভারত।





