বর্তমান সময়ে বিকশিত হলদিয়া তার মূল আধার হল হলদিয়া বন্দর। তিনি সাংসদ না থাকেল হত না হলদিয়া বন্দর। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে গুরু স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ সরস্বতীর প্রভাবে ব্রহ্মচর্য ব্রত গ্রহণ করে জনসেবা ও দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করেন। বাংলা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় পড়াশোনা ছেড়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি অসহযোগ আন্দোলন ও লবণ সত্যাগ্রহসহ সক্রিয় ভূমিকা নেন। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্ব অসাধারণ। ১৭ ডিসেম্বর ১৯৪২ সালে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সতীশচন্দ্র সামন্ত এর প্রথম সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত হন।
advertisement
স্বাধীনতার পর সতীশ চন্দ্র সামন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। হলদিয়া বন্দরের উন্নয়নেও তাঁর অবদান রয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গণপরিষদ গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে। সেই গণপরিষদের সদস্য ছিলেন সতীশচন্দ্র সামন্ত।গণপরিষদের শ্যাডো পার্লামেন্টে দেশের উন্নতির জন্য নানান ধরনের পরিকল্পনা করা হয়। যার মধ্যে অন্যতম হল বন্দর স্থাপন। গণপরিষদের সভায় কলকাতা বন্দরের সহযোগী বন্দর হিসাবে পারাদ্বীপে বন্দর তৈরি করার প্রস্তাব দেন বিজু পট্টনায়েক। বিজু পট্টনায়কের সেই প্রস্তাবকে সমর্থন করে বন্দর তৈরির জন্য পশ্চিমবঙ্গের কোনও উপকূলকে বেছে নেওয়ার আহ্বান জানায় সতীশচন্দ্র সামন্ত।
এ বিষয়ে আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ জয়দেব মালাকার জানান, ‘হলদিয়া বন্দর গড়ে ওঠার পিছনে অবদান রয়েছে সতীশচন্দ্র সামন্তের। তিনি হলদিয়া বন্দর গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। পরবর্তীকালে হুগলি নদীর বক্ষে নৌকা নিয়ে পরিদর্শনে বের হন কোথায় বন্দর তৈরি করা যায়। সেই মতো গেঁওখালি থেকে যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীকালে হলদি ও হুগলি নদীর মিলনস্থল এবং বঙ্গোপসাগরের অদূরে হলদিয়াকে বেছে নেওয়া হয়। ১৯৬৩ সালে হলদিয়া বন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। জমি অধিগ্রহণের পর হলদিয়ার বন্দরের আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণের কাজ শুরু হয়। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তদানীন্তন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। সেই সভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সেন হলদিয়া বন্দরের রূপকার হিসাবে সতীশচন্দ্র সামন্তের নাম ঘোষণা করেন।
ষাটের দশকে হলদিয়া বন্দর গড়ে তোলার কাজ শুরু হলেও। কলকাতা বন্দরের সহযোগী বন্ধন হিসেবে কাজ শুরু করে ১৯৭৭ সালে। হলদিয়া বন্দর গড়ে তোলার জন্য প্রথম থেকেই অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন সতীশচন্দ্র সামন্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলদিয়া বন্দরের নামকরণ আজও তার নামে হয়নি। সতীশচন্দ্র সামন্তের সারা জীবন ছিল ছিল সেবা, ত্যাগ ও স্বাধীনতার প্রতীক। ভারত সরকার ২০০১ সালে তাঁর নামে ডাকটিকিট প্রকাশ করে সম্মান জানায়। বর্তমানে হলদিয়া বন্দরের রূপকার হিসাবে সতীশ চন্দ্র সামন্তের নাম ভুলে যাচ্ছেন মানুষজন।