জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ওই বৃদ্ধের নাম অনিল দাস৷ এলাকায় তিনি ভীমদা বলেই পরিচিত৷ আগে সিপিএম করলেও অনিলবাবু বর্তমানে খড়্গপুরের আমরা বামপন্থী নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত৷ অভিযুক্ত ওই তৃণমূলনেত্রীর নাম বেবি কোলে৷
যদিও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও৷ পুলিশ যাতে এই ঘটনায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়, সেই দাবিও করেছেন খড়্গপুরের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ দাস৷ ইতিমধ্যেই খড়্গপুর টাউন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রহৃত বাম নেতা অনিল দাসও।
advertisement
রেলশহর খড়্গপুরের প্রতিবাদী মুখ তথা ‘আমরা বামপন্থী, খড়্গপুর’ সংগঠনের সম্পাদক অনিল দাস ওরফে ভীম দা-কে রাস্তায় ফেলে মারধর করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেত্রী বেবি কোলের বিরুদ্ধে। নিজেকে বাঁচাতে রাস্তার পাশে একটি রংয়ের দোকানে আশ্রয় নিলে, সেই দোকানের রংয়ের বালতি দিয়েও আক্রমণ করা হয় বলে অভিযোগ। সোমবার সকালে খড়্গপুর শহরের খরিদা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যেই
প্রবীণ এই বাম নেতাকে নির্মমভাবে প্রহার তথা শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে নিন্দায় সরব হয়েছেন শাসক ও বিরোধীরা। সকলেই এক বাক্যে অভিযুক্ত নেত্রীর শাস্তির দাবি তুলেছেন। ইতিমধ্যেই খড়্গপুর টাউন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রহৃত বাম নেতা অনিল দাসও।
অনিলবাবুর দাবি, দিন কয়েক আগে খরিদা এলাকায় তাঁর বাড়ির পাশের এক মহিলার (দুর্গা সাহুর) বাড়ির দেওয়াল ভেঙে দিয়ে এবং শৌচাগার বন্ধ করে দিয়ে অত্যাচার চালাচ্ছিলেন তৃণমূল নেত্রী বেবি কোলে। এর পরই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ওই মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে খড়্গপুর টাউন থনায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে বেবি কোলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন দুর্গা সাহু। সেই ঘটনারই প্রতিশোধ নিতে এদিন সকালে তিনি যখন খরিদা বাজার থেকে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন, সেই সময়ই বেবি কোলে তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে দাবি করেছেন অনিল দাস।
আরও পড়ুন: ছাত্রীকে গণধর্ষণের পরেও থানার পাশেই ঘোরাঘুরি, বেপরোয়া হতে গিয়ে কীভাবে পুলিশের জালে মনোজিৎ?
অনিলবাবুর অভিযোগ, “প্রথমে আমাকে রাস্তায় ফেলে মারধর করে। এরপর আমি নিজেকে বাঁচাতে যখন একটি রংয়ের দোকানে ঢুকে যাই, সেখানে রংয়ের বালতি দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে আমার গায়ে রং ঢেলে দেন বেবি কোলে। তারপরও আমাকে টেনেহিঁচড়ে বের করার চেষ্টা করছিলেন উনি। আমি কোনওমতে নিজেকে বাঁচাই। এর পরই স্থানীয়দের সহায়তায় থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।” অবিলম্বে বেবি কোলেকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন অনিল দাস। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, “যাতে কেউ আর অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে, সে জন্যই এভাবে হামলা চালানো হল!”
ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন খড়্গপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা ও কাউন্সিলর প্রদীপ সরকার। তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” ঘটনার নিন্দা করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘খড়্গপুরের ভাইরাল ভিডিও উদ্বিগ্ন হওয়ার মতোই৷ অভিযোগ থাকতে পারে৷ তবে এমন ভাবে মারার অধিকার কারও নেই।’ বিজেপি-র জেলা মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, “একজন প্রবীণ নেতার উপর এইভাবে আক্রমণ মেনে নেওয়া যায় না! আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। আসলে যেখানেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়, সেখানেই এভাবে আক্রমণ নেমে আসে। আগে বিজেপির উপরে হতো, এখন বাম-কংগ্রেসও বাদ যাচ্ছে না!”
যদিও অভিযুক্ত তৃণমূলনেত্রী বেবি কোলের দাবি, ‘কাজ দেওয়ার নাম করে অনিল দাস নামে প্রাক্তন ওই সিপিএম নেতা একাধিক মহিলার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়েছিলেন৷ কিন্তু তিনি কাজও দেননি, টাকাও ফেরত দেননি৷ তাছাডা় উনি আমাদের দলনেত্রীর বিরুদ্ধে কুৎসিত মন্তব্য করেছিলেন৷ এ দিন প্রতারিত মহিলাদের নিয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলতে গেলেও তিনি কোনও কথাই শুনতে চাননি৷ তখনই প্রতারিত মহিলারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে মারধর করেন৷’ যদিও বেবি কোলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অনিল দাস৷