তবে জানেন কী, এই দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্রের সূচনা কোথায় হয়েছিল হুগলির শ্রীরামপুর শহরে। প্রথম ভারতীয় ভাষায় যে সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল সেটি ছিল বাংলা হরফে। যে সংবাদপত্রের নাম ছিল নাম সমাচার দর্পণ। শ্রীরামপুরের তৎকালীন ব্যাপটিস্ট মিশনারি থেকে প্রকাশিত হতো এই সংবাদ পত্রিকা। পঞ্চানন কর্মকার তিনি প্রথম তৈরি করেন কাঠের ব্লকের বাংলা হরফ সেই দিয়েই চাপানো হতো তৎকালীন বাংলা পত্রিকা।
advertisement
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশনারিতে প্রথম বাষ্প চালিত ছাপার যন্ত্র নিয়ে আসা হয়। পঞ্চানন কর্মকার তৈরি করেন প্রথম বাংলা হরফের ব্লক । তার পর থেকে বাংলা ভাষাতে প্রকাশিত হতে শুরু হয় বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারত থেকে শুরু করে অন্যান্য পৌরাণিক গ্রন্থগুলিও। পরবর্তীতে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় প্রথম বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র যার নাম ছিল সমাচার দর্পণ।
মাসিক এক টাকা মূল্যের এই পত্রিকার মধ্যে স্থান পেত ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক মতবাদ, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য। এই পত্রিকাটি ছিল সাপ্তাহিক। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মে তারিখে প্রথম প্রকাশিত হয় এই পত্রিকা। সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান। কিন্তু তিনি ছিলেন নামে মাত্র সম্পাদক। বাঙালি পণ্ডিতরাই আসলে সমাচার দর্পণ সম্পাদনা করতেন। পত্রিকাটি ধর্মীয় বির্তকে না জড়িয়ে খ্রিস্টান মতবাদের প্রতি পক্ষপাত দেখাত। পরবর্তীকালে এই পত্রিকাটি সপ্তাহে দু’বার করে প্রকাশিত হতে থাকে। জয়গোপাল তর্কালঙ্কার বাংলা সংবাদ রচনা ও সঙ্কলনে সম্পাদকের সহায়ক ছিলেন বলে তা উন্নতমানের সংবাদপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল। সে আমলে প্রগতিশীল পত্রিকা হিসেবে এর বিশেষ গুরুত্ব ছিল। মূলত ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই পত্রিকা সাপ্তাহিক রূপে প্রকাশিত হতে থাকে। তবে পরেও কয়েকবার এই পত্রিকা পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিল।
এই বিষয়ে জনানর জন্য আমরা গিয়েছিলাম শ্রীরামপুর কলেজে। শ্রীরামপুর কলেজের ভারপ্রাপ্ত লাইব্রেরিয়ান নিউজিল্যান্ডের বাসিন্দা পিটার বলেন, সেই সময় সমাচার দর্পণকে বাংলা ভাষার সংবাদপত্র বলার থেকে তিনি সংবাদ বুলেটিন বলতে বেশি পছন্দ করছেন। কারণ সেই সময় বর্তমানে যে ভাবে বুলেটিন আসে সেই ভাবে ছাপানো হতো বিভিন্ন খবর। সমাচার দর্পণের পর থেকেই বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায় বিভিন্ন লেখক লেখিকাদের। তিনি আরও বলেন দেশীয় ভাষায় সাহিত্যচর্চার ও বুনিয়াদ তৈরি হয়েছিল সমাচার দর্পণ পত্রিকা থেকেই।
রাহী হালদার