গত বুধবার সকালে ফলতার বুদা গ্রামে একটি জ্বলন্ত খড়ের গাদার ভিতর থেকে এক মহিলার দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়৷ মৃতদেহটি এমন ভাবে পুড়ে গিয়েছিল যে সেটি শনাক্ত করার উপায় ছিল না৷ শেষ পর্যন্ত গলার রুপোর চেন, পোশাকের না পোড়া অংশ ও জুতো দেখে তরুণীকে শনাক্ত করেন তাঁর বাপের বাড়ির সদস্যরা৷
ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জোনাল) মিতুনকুমার দে এ দিন জানান, মৃত ওই গৃহবধূ দক্ষিণ চব্বিশ পরগণারই বিষ্ণুপুর এলাকায় নিজের বাপের বাড়িতে থাকতেন৷ বছর পাঁচেক আগে ফলতার বুদা গ্রামের বাসিন্দা গোলাম আলি শেখের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর৷ কিন্তু দাম্পত্য কলহের জেরে গত প্রায় দেড় বছর ধরে নিজের মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকতেন ওই তরুণী৷
advertisement
পুলিশ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার একাধিকবার ফোন করে স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে গোলাম আলি শেখ৷ এর পর জামাকাপড় কিনে দেওয়ার নাম করে স্ত্রীকে দেখা করতে বলে সে৷ মঙ্গলবার বিকেলে বাখরাহাট এলাকা থেকে স্ত্রীকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায় গোলাম আলি শেখ৷ এর পর খাওয়া দাওয়া, কেনাকাটা সেরে স্ত্রীকে নিয়ে বুদা গ্রামের ওই নির্জন এলাকায় পৌঁছয় ওই যুবক৷
অভিযোগ, ওই দিন রাতেই ঠান্ডা মাথায় স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় ওই যুবক৷ এর পরই শুরু হয় নির্যাতন৷ পুকুরের জলে ডুবিয়ে নিজের স্ত্রীকে ওই যুবক খুন করে বলে অভিযোগ৷ এর পর খড়ের গাদার মধ্যে দেহ লুকিয়ে রেখে বিষ্ণুপুরে ফিরে যায় সে৷
পেশায় দর্জি গোলাম আলি নিজের শ্বশুরবাড়ির এলাকাতেই কাজ করত৷ মঙ্গলবার রাতেই বাখরাহাট এলাকার একটি পেট্রোল পাম্প থেকে পেট্রোল কিনে এনে ওই খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয় অভিযুক্ত৷ উদ্দেশ্য ছিল স্ত্রীর দেহ পুড়িয়ে দেওয়া৷ খড়ের গাদায় আগুন লাগানোর পর রাতে ফের বিষ্ণুপুরে নিজের কাজের জায়গায় ফিরে আসে অভিযুক্ত৷
রাতভর মেয়ের খোঁজ না পেয়ে পরের দিন জামাইয়ের কাছে খোঁজখবর করেন তরুণীর বাবা৷ অভিযোগ তখন তাঁকে গালিগালাজ করে অভিযুক্ত যুবক৷ তখনই তরুণীর বাবা এবং এলাকার বাসিন্দারা অভিযুক্ত গোলাম আলিকে মারধর করে৷ এর পর ঘটনাস্থল থেকে পালায় সে৷
জামাইয়ের এই আচরণে সন্দেহ হওয়ায় পুলিশে অভিযোগ জানান মৃতা তরুণীর বাবা৷ এর পরই ফলতায় এক তরুণীর দেহ উদ্ধারের খবর আসে৷ দেহটি শনাক্ত করে মৃতার পরিবার৷ এর পরই তদন্তে নেমে অভিযুক্ত গোলাম আলিকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ তদন্তকারীদের দাবি সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে আক্রোশ থেকেই স্ত্রীকে খুন করেছে অভিযুক্ত গোলাম আলি শেখ৷