পাঞ্জাব শেখ একজন সাধারণ চা বিক্রেতা। গুসকরা শহরের বাসস্ট্যান্ডের ঠিক উল্টো দিকে তাঁর ছোট্ট চায়ের দোকান রয়েছে। এই দোকানে বসে চা বিক্রি করার টাকাতেই তাঁর সংসার চলে। জীবনযুদ্ধের ময়দানে নিজে প্রতিনিয়ত লড়ে গিয়েও পিছিয়ে পড়া মানুষদের পাশে দাঁড়ান তিনি। ছোট্ট দোকান থেকে উপার্জিত অর্থে তিনি অসহায় মানুষদের সাহায্য করেন। বহুবছর ধরে নিঃস্বার্থভাবে এই কাজ করে চলেছেন তিনি।
advertisement
প্রতিদিনই পাঞ্জাব কোনও না কোনও মানুষকে সাহায্য করেন। কখনও অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দেন, কখনও আবার ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে সাহায্যের জন্য ছুটে যান। বিভিন্ন সময় পুজোপার্বণে অসহায় মানুষদের বস্ত্রও উপহার দেন তিনি। এছাড়া তাঁর দোকানে দুঃস্থ-অসহায় মানুষদের জন্য চা, বিস্কুট, কেক সবসময় ফ্রি।
নিঃস্বার্থভাবে প্রায় প্রতিদিন এই কাজগুলি করেন তিনি। এবার এই পাঞ্জাব শেখ নিজের উদ্যোগে ‘পাঞ্জাবের প্রয়াস’ শুরু করেছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার শুধুমাত্র অসহায়-দুঃস্থ মানুষের জন্য মহাভোজের আয়োজন করছেন। প্রতি মঙ্গলবার প্রায় একশো অসহায় মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন তিনি। এই বিষয়টির নাম রেখেছেন ‘পাঞ্জাবের প্রয়াস’।
পাঞ্জাব শেখ এই প্রসঙ্গে বলেন, “একটা সময়ে আমার নিজের খুব খারাপ অবস্থা হয়েছিল। সেই সময় আমি নিজেকে দিয়ে উপলব্ধি করেছিলাম একটা অসহায় মানুষের কতটা কষ্ট। তাই অসহায়-দুঃস্থ মানুষের পাশে থাকার জন্য এই পাঞ্জাবের প্রয়াস। এখনও অনেকে নানা কটূক্তি করেন। তবে আমি তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। যতদিন বাঁচব এই মানুষগুলির পাশে থাকার চেষ্টা করব।”
অসহায়-দুঃস্থ মানুষদের ভাত, ডাল, সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, মিষ্টি, চাটনি সহ আরও অনেক কিছু খাওয়াচ্ছেন পাঞ্জাব। কোনও মঙ্গলবার মাছ, কখনও আবার মাংস। প্রতি মঙ্গলবার খাবারের তালিকায় থাকে আলাদা আলাদা পদ। এছাড়া যাঁরা নিরামিষ খান তাঁদের জন্যও রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা।
প্রথমে সামান্য কয়েকজনকে দিয়ে শুরু হলেও এখন সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০-৮০ জন। প্রত্যেক মঙ্গলবার বেলা ১২টা বাজলেই একে একে সকলে আসতে শুরু করেন। পাঞ্জাববাবুর এই কাজে তাঁকে সাহায্য করছেন তাঁর পরিবার এবং সবথেকে বেশি তাঁর বন্ধুরা। বন্ধুদের তালিকায় রয়েছে শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, পুলিশ, শিল্পী থেকে শুরু করে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া আরও অনেকে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
পাঞ্জাবের প্রয়াস প্রসঙ্গে গুসকরা শহরের বাসিন্দা রাজীব দে বলেন, “দারুণ উদ্যোগ। আমি চাইব এমন উদ্যোগ যেন আরও অনেকে নেন। সকলের কাছে অনুরোধ, যেন সবাই পাঞ্জাবদার এই প্রয়াসে সাহায্য করে।” পাঞ্জাববাবু মানুষকে যেটুকু সাহায্য করেন, প্রায় সবটাই তিনি ছবি ও ভিডিও তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করার উদ্দেশ্য সেখান থেকে রোজগার করা নয়। তাঁর কথায়, মানুষ যাতে এগুলি দেখে এই ধরনের কাজে উদ্যোগী হয় সেই কারণেই ছবি, ভিডিও পোস্ট করেন। সব মিলিয়ে, একজন চা বিক্রেতার এহেন উদ্যোগ সত্যিই বেশ প্রশংসনীয়। হয়ত এভাবেই আগামী দিনে আরও এগিয়ে যাবে চা বিক্রেতার ‘পাঞ্জাবের প্রয়াস’।





