পূর্ব বর্ধমানের বোরহাট এলাকায় অবস্থিত কমলাকান্ত কালিবাড়ি। কথিত আছে, সাধক কমলাকান্ত তাঁর মামাবাড়ি গলসির চান্না গ্রামে থাকতেন। সেখানেই তিনি সাধনভজন করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। রাজার আমন্ত্রণে তিনি আসেন বর্ধমানের রাজ দরবারে এবং সেখানে একটি গান করেন তিনি। তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে রাজা তেজচাঁদ তাকে তার সভাপণ্ডিত করে বর্ধমানে রেখে দেন। তিনি যেহেতু তন্ত্রসাধক ছিলেন তাই রাজা তাকে ১৮০৯ খ্রিস্টাব্দের এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেন। এখানেই তিনি পঞ্চমুন্ডীর আসন স্থাপন করে শুরু করেন দেবীর সাধনা। এই মন্দিরে সাধকের অনেক অলৌকিক কাহিনী রয়েছে। যেমন- রাজাকে আমাবস্যার রাতে পূর্ণিমার চাঁদ দেখিয়েছিলেন তিনি, কারণকে দুধে পরিণত করেছিলেন। এছাড়াও শোনা যায় নানান কাহিনি।
advertisement
একদিন সাধনা করার সময় অন্য একজন সাধক এসেছিলেন তার কাছে। আলাপ আলোচনার পর তিনি যাওয়ার সময় সাধক কমলাকান্তকে একটি কাঁচের পুতুল উপহার দিয়েছিলেন। পুতুলটি পাওয়ার পরই তিনি বলেন রাজকে খবর দাও আমার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তখনকার দিনে অন্তরজলী যাত্রা করা হত। তাই বর্ধমানের মহারাজ ওনাকে কাশি নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। সাধক বলেছিলেন আমি মাকে ছেড়ে যেতে চাই না আমাকে মায়ের থেকে আলাদা করবেন না। সাধক কমলাকান্তের জীবনের শেষ গান ‘কি গরজ আমি গঙ্গা তীরে যাব, কালো মায়ের কালো ছেলে বিমাতার কি স্মরণ নেব’ এই গান গাইতে গাইতেই উনি দেহত্যাগ করেন। কথিত আছে, উনি তো গঙ্গায় যাননি। গঙ্গা নিজেই এসেছিল এই মন্দিরে, মাটি ভেদ করে জল এসে পড়েছিল তার মুখে। সেই স্থানে একটি কুয়ো রয়েছে আজও পুজোর সমস্ত কাজ ও ভোগ রান্না করা হয় সেই জলেই। এমনকি স্থানীয় মানুষ যেন সেই দলটিকে গঙ্গা জল হিসেবেই ব্যবহার করেন।
সাধক প্রতি আমাবস্যায় দেবীর মূর্তি গড়ে নিজের বুকের ওপর রেখে পুজো করতেন এবং তা বিসর্জন দিয়ে দিতেন। তার মৃত্যুর পর তার তৈরি দেবী মূর্তির আদলে তৈরি করা হয় বর্তমান মূর্তিটি। সাধক কমলাকান্ত বলতেন তাকে যেন মায়ের থেকে আলাদা না করা হয় এবং তিনি যেহেতু নিজের বুকের উপর রেখে দেবীকে পুজো করতেন তাই তার মৃত্যুর পর তাকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল মন্দিরে এবং তার সমাধির উপরেই তৈরি করা হয় বেদি। সেখানেই পূজিত হন দেবী কমলাকান্ত। দেবীর প্রতিমাতেও রয়েছে বিশেষত্ব। তিনি কৃষ্ণ এবং কালী দু’ভাবেই দেবীর সাধনা করেছিলেন তাই দেবীর মুখের সঙ্গে মিল রয়েছে কৃষ্ণের। আবার তিনি এক কিশোরীর মধ্যে দেবীর রূপ দেখেছিলেন তাই দেবীর মুখ সঙ্গে মিল রয়েছে কিশোরীও।
সাধক দেবীকে মাগুর মাছ না হলে শোল মাছের ভোগ দিতেন তাই প্রতি অমাবস্যাতে আজও দেবীকে মাগুর মাছ অথবা শোল মাছ ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়। এছাড়াও পুজোর সময় তেরো রকমের ভাজা, খিচুড়ি, পায়েস পোলাও ইত্যাদি ভোগ হিসেবে দেওয়া হয়। আগে পশু বলি প্রথা চালু থাকলেও বর্তমানে আখ বা চাল কুমড়ো বলি দেওয়া হয়।