প্রায় প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কাঠের এই শিল্প। সারাবছরই চলে কাঠ কাটা, ঘষামাজা, আকার দেওয়া, রঙ করা। সব মিলিয়ে যেন সবসময় একটা কর্মশালা পুরো গ্রামজুড়ে। তবে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকাল এলে এই ব্যস্ততা যেন বহু গুণ বেড়ে যায়। শীত পড়তেই গ্রামের পুরুষদের বেশিরভাগই আর বাড়িতে থাকেন না। নিজেদের তৈরি কাঠের সামগ্রী নিয়ে তাঁরা বেরিয়ে পড়েন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। কারণ শীতকাল মানেই রাজ্য জুড়ে বড় বড় গ্রাম্য মেলা, পৌষমেলা, হস্তশিল্প মেলা থেকে শুরু করে সরকারি অনুষ্ঠান, সব জায়গাতেই নতুনগ্রামের কাষ্ঠশিল্পীদের ডাক পড়ে।
advertisement
আরও পড়ুন : খাঁচায় দেওয়া হল ছাগলের টোপ, বাঘ ধরতে ৪৫ জনের টিম! জাল দিয়ে চার কিলোমিটার ঘিরল বন দফতর
গ্রামের শিল্পী গৌরাঙ্গ ভাস্কর বলেন, “শীতকালে বিভিন্ন জায়গায় মেলা হয়। আর এই মেলার সিজেন এলেই আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। আয় ভাল হয় এইসময়।” রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন মেলায় এখন স্থায়ী জায়গা পাচ্ছেন শিল্পীরা। সেখানে তাঁরা নিজেদের তৈরি শিল্পকর্ম সাজিয়ে বসেন। দীর্ঘ এক বছরের শ্রমশিল্পের প্রকৃত মূল্য মেলে এই মেলাগুলিতে। তাই শীতকাল তাঁদের কাছে শুধু ব্যস্ততার নয়, আয়েরও প্রধান সময়। অনেক শিল্পী ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মেলায় পৌঁছেও গেছেন, কেউ আবার বাড়িতেই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, নতুন ডিজাইনের পুতুল, আসবাব, শো-পিস তৈরি করে চলেছেন পুরোদমে। গ্রামবাসী প্রফুল্ল ভাস্কর বলেন, “ছেলে মেয়ে সবাই এইসময় কাজে ব্যস্ত থাকে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
অনেকেই বিভিন্ন মেলায় বেরিয়ে গেছে। সরকার থেকেও আমাদের এখন মেলা দেয়। এইসময় আমাদের ভাল হয়, এই আয় থেকে মোটামুটি আমাদের চলে।” গ্রামে এখন সকাল থেকে রাত সব সময়ই কেমন একটা উৎসবের আবহ। কেউ রঙ মেশাচ্ছেন, কেউ কাঠ ঘষছেন, কেউ আবার বিক্রির জন্য জিনিসপত্র বেঁধে প্যাকেট করছেন। গ্রামবাসীদের মুখেও ধরা পড়ছে শীতের আনন্দ আর কাজের সন্তুষ্টি। যেন শীত পড়তেই পুরো গ্রাম জেগে ওঠে নতুন উদ্যমে। সবার চোখে মুখে একটু বেশি হাসি, একটু বেশি আশার আলো। নতুনগ্রামের এই কাঠের শিল্প শুধু তাঁদের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে মজবুত করছে না, একইসঙ্গে বহন করে চলছে বাংলার দীর্ঘদিনের লোকশিল্পের ঐতিহ্য। এই গ্রাম আজও প্রমাণ করে দেয় ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে শিল্পকে ভালবেসে কাজ করলে, এক টুকরো কাঠও হয়ে উঠতে পারে শিল্পীর হাতে জীবন্ত সৃষ্টি।





