রাজ পরিবার সূত্রে জানা যায় বর্ধমান রাজার নায়েব ছিলেন উদয়নারায়ণ ঘোষ।তিনি মেদিনীপুর জেলায় শিকার করতে এসেছিলেন। পরে নাড়াজোল এলাকার জঙ্গল সাফাই করে তৈরি করেন বাড়ি। এই বাড়িতেই অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি পুজো শুরু করেন বাংলার ৮২০ বঙ্গাব্দে। উদয়নারায়ণ ঘোষ দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে উদয়নারায়ণ ঘোষ নাড়াজোল রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠা করেন।
১০৩০ বঙ্গাব্দে মুঘল আমলে এই পরিবার ‘খান’ উপাধি লাভ করেন। তখন থেকেই তাঁরা এই উপাধি ব্যবহার করে আসছেন। মেদিনীপুর জমিদারির সদর দফতর কর্ণগড়ের সঙ্গে নাড়াজোল রাজবাড়ির শাসকদের ঘনিষ্ঠতা ছিল।আজ নাড়াজোল রাজবাড়ি ধ্বংসের পথে,রাজবাড়ির বহু ভবন ভগ্নপ্রায়। আগাছায় ঢাকা পড়ছে রাজবাড়ির সৌন্দর্য ও কারুকার্যের নিদর্শন। কিন্তু প্রথা মেনে আজও রাজবাড়িতে অষ্টধাতুর দুর্গামূর্তি পূজিত হন।
advertisement
রাজবাড়িতে বৈষ্ণব মতে পূজিত হন মা দুর্গা। তাই নেই বলি প্রথা। সমস্ত জোগাড় আয়োজন মহিলারা করে দিলেও মায়ের প্রসাদ ও ভোগ রান্না করেন পুরোহিত।তবে মায়ের বিদায় বেলায় সিঁদুরখেলায় অংশ নেয় রাজ পরিবারের মহিলারা।রাজবাড়ির অষ্টধাতুর মূর্তিতে মা একাই পূজিত হন। এখানে মায়ের সঙ্গে থাকেন না কার্তিক,গণেশ, লক্ষ্মী ও সরস্বতী।এখানে যেহেতু অষ্টধাতুর দুর্গা, তাই বিসর্জন হয় না । শুধুমাত্র ঘট ডুবিয়ে নিরঞ্জন দেওয়া হয়।দাসপুর ছাড়াও দূরদূরান্তের বহু মানুষ পুজোয় ভিড় জমান নাড়াজোল রাজবাড়ির দুর্গা পুজোয়। পুজোর ক’দিন রাজ বাড়িতেই পুজোয় মাতেন বর্তমান প্রজন্ম।
দাসপুরের নাড়াজোল রাজবাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটি ঐতিহাসিক স্থান।মেদিনীপুরের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জড়িয়ে আছে নাড়াজোল রাজবাড়িতে।রাজা নরেন্দ্রলাল খান ও তার পুত্র দেবেন্দ্রলাল খান প্রকৃত দেশপ্রমিক হিসাবে পরিচিত ছিলেন।ক্ষুদিরাম বসুর বাবা ত্রৈলোক্যনাথ বসু নাড়াজোল রাজবাড়ির প্রধান কর্মচারী ছিলেন। রাজবাড়ির যা খাজনা আদায় হত, উনি রাজাবাহাদুরকে তার হিসাব দেখাতেন বলে জানান রাজবাড়ির বর্তমান সদস্য।
আরও পড়ুন : দুর্গাপুজোয় কেন প্রয়োজন ১০৮ লাল পদ্ম? কখন নিবেদন করা হয় এই ফুল? জানুন জ্যোতিষ পরামর্শ
এই রাজবাড়ি পরিদর্শন করেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কাজি নজরুল ইসলাম থেকে মহাত্মা গান্ধি, মতিলাল নেহরু, জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দিরা গান্ধী। রাজবাড়ির বর্তমান সদস্যদের কথায়, পুজোয় আগের মতো জৌলুস না থাকলেও সমস্ত রীতিনীতি এখনও বজায় রয়েছে। তবে আর্থিক অনটনের জেরে পুজোর এলাহি আয়োজনে অনেক কমাতে হয়েছে।
শুধু পুজো নয়,রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাজবাড়ির মূল ভবনও ভগ্নপ্রায়। আগাছায় ঢাকা পড়েছে অনেক অংশ।রাজবাড়ির অদূরে রয়েছে ‘হাওয়া মহল’। তারও কিছু দুরে এক বিশাল পুকুর বা জলাশয়ের মাঝেই রয়েছে ‘জলটুঙ্গি’ তথা রাজাদের আউটহাউস, বর্তমানে সেটিও আগাছা বা পানায় ঢাকা পড়ে গিয়েছে।