অথচ সে এক দিন ছিল। পুজো মানেই যেন ছিল আভিজাত্যের সঙ্গে উৎসবের মিশেল। আলোর রোশনাইয়ে ভেসে যেত রঙমহল। নহবতখানা থেকে ভেসে আসতো সানাইয়ের সুর। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলতো সুরের মূর্ছনা। বিশাল বিশাল হাঁড়িতে ভোগ রান্না হতো। ঘন্টা বাজতো ঘন্টাঘর থেকে। সেই ঘন্টাধ্বনি শুনে দলে দলে আসতেন প্রজারা। একসঙ্গে পঙতিভোজে বসতেন হাজার জন। রানীমা নিজে তদারক করতেন।শুধু কি খাওয়া দাওয়া! কত কি হতো। পালাগান গাইতে আসতো কলকাতার সেরা গাইয়েরা। যাত্রা হতো রাতভর।
advertisement
মানকর রাজবাড়ি তৈরি করেছিলেন বর্ধমানের রাজারা। বর্ধমানের মহারাজ চিত্রসেন ও তাঁর পুত্র কীর্তিচাঁদ কনৌজ ব্রাহ্মণ ভক্তলাল গোস্বামীর কাছে দীক্ষা নেন। প্রনামী স্বরূপ দীক্ষাগুরুর জন্য রঙমহল গড়ে দিয়েছিলেন কীর্তিচাঁদ। সেই রঙমহলের কেন্দ্রে ছিল রাধাবল্লভের মন্দির। ছিল শিবমন্দির। এখানেই পুজো হতো মা চন্ডীকার। মা চন্ডীর ছিল সোনার প্রতিমা। রঙমহলকে ঘিরে ছিল রাজবাড়ির কর্মচারীদের আবাস। ছিল বারোটি শানবাঁধানো ঘাটের জলাশয় কৃষ্ণগঙ্গা। তার সামনের মনোরম বাগান খোসবাগ।
শারদীয়া দুর্গোৎসবে সেজে উঠতো রঙমহল। প্রজারা রাজবাড়ির পুজো দেখতে দলে দলে ভিড় করতেন। প্রজাদের খাওয়া থেকে শুরু করে মনোরঞ্জনের সব খরচই বহন করতেন বর্ধমানের মহারাজা।
জমিদারি বিলোপের পর ঔজ্জ্বল্য হারায় রঙমহল। একে একে সেখান থেকে বিদায় নেন কর্মীরা। পুজো হতো টিমটিম করে। সংস্কারের অভাবে ভেঙে পরতে শুরু করে এক একটি বিল্ডিং। মূল মন্দিরের বাইরের মহলে দেড় দশক আগেও প্রতিমা এনে পুজো হয়েছিল। সেই শেষ। আর ঢাক বাজে না এই রাজবাড়িতে। আগাছায় ভরে উঠেছে চারপাশ। সেদিনের আলো ঝলমলে দেওয়ালগুলিতে আজ শ্যাওলার আস্তরণ। থম মেরে দাঁড়িয়ে নিশ্চিহ্ন হতে বসা অট্টালিকা। অতীত স্মৃতির দীর্ঘশ্বাস ধাক্কা খেয়ে বেড়ায় এ দেওয়াল থেকে সে দেওয়ালে। এখানে আর সানাই বাজবে না। নিশ্চুপ থাকবে ঘন্টাঘর। পুজোর বোধন আর হবে না রাজবাড়ির রঙমহলে। মন ভালো নেই মানকরের।
Saradindu Ghosh