শিকড়ের পুজো। যে শিকড় ছিল বাংলাদেশের যশোর জেলার মহেশপুর গ্রামে। জমিদারি বাড়িতেই হত পুজো। দেশভাগের দু’বছর পর নদিয়া কৃষ্ণগঞ্জে আসেন। সম্পত্তির বিনিময় হয়। কিন্তু ক্ষতি সামলানো যায়নি। তবে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসলেও বন্ধ করেননি তাঁদের পারিবারিক পুজো। আজও দ্বিভূজা দুর্গার পুজো হয়ে আসছে নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের রায়চৌধুরিদের বাড়িতে।
দ্বিভূজা হলেও দুর্গার বাকি আটটা হাতও আছে। তবে আকারে ছোট। সেই কারণেই আড়াল রাখা হয়। প্রতিমার চুল ও অলঙ্কারের মধ্যে। এর সঠিক কারণ অবশ্য জানেন না পরিবারের কেউ-ই। তবে সম্ভবত কোন ঘটনায় হাত ভেঙে গিয়ে থাকবে। নতুবা সেই প্রতীকী ইঙ্গিত।
advertisement
পঞ্চমীতে বোধন। ষষ্ঠী থেকে নবমী ভোগ। এখানকার বিশেষত্ব ভাজা কলাইয়ের ডালের ভোগ। নতুন কলাই-এর ভোগ দেওয়া হয় প্রতিমাকে। সঙ্গে মুগ ডালের ভোগ, পোলাও ভোগ, পাঁচ রকম ভাজা, তরকারি, চাটনি, পায়েস, মিস্টির আয়োজন। বন্দুকের আওয়াজে শুরু হয় সন্ধিপুজো।
সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত হোমকুণ্ড জ্বলে নাটমন্দিরে। দুর্গা এখানে ঘরের মেয়ে। দশমীতে বিদায়ের দিন মেয়ের জন্য বিশেষ আয়োজন। পান্তাভাত, কচুশাক, কলাইয়ের বড়ার ভোগ। আর মহাদেবের জন্য কলকে সাজিয়ে তামাক ভোগ।
পুজোর বয়স প্রায় চারশো বছর। সঙ্গে বাংলাদেশের স্মৃতি। জমিদারবাড়ির জাঁকজমক, আড়ম্বর সবই আজ স্মৃতি। তবু পুজোর কদিন সেদিনের বনেদিয়ানা, ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে বছরভর চেষ্টা চালিয়ে যান রায়চৌধুরী বংশের সদস্যরা।