কথা শিল্পীর জন্ম হুগলির ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরে হলেও, পড়াশোনা তিনি বিহারের ভাগলপুরে মামার বাড়ি থেকেই সম্পন্ন করেন। সেখান থেকেই পরবর্তীকালে কাজের সূত্রে তিনি বার্মায় চলে যান। পরে হাওড়ায় এসে বাজে শিবপুরের অলোকা সিনেমার কাছে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি । পরে দিদি অনিলা দেবীর শ্বশুরবাড়ির ঠিক কাছে ১৯২৩ সালে দেউলটির এই জায়গাটি কিনে তিনি সামতাবেড়ের এই বাড়িটি স্থাপন করেন (Durga Puja 2021 | Travel)। কড়ি - বরগা , চুন , সুরকি সহযোগে গঠিত এই বাসভবনটিতেই কথাশিল্পীর জীবনের শেষ ১২ বছর ( ১৯২৬-১৯৩৮ ) অতিক্রান্ত হয় ।
advertisement
প্রায় ১০০ বছরের কাছাকাছি এই বাড়িটির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে রূপনারায়ণ । সামতাবেড়ের এই বাসভবনটি থেকেই তিনি প্রকাশ করেছেন শ্রীকান্তর মত একাধিক উপন্যাস । এছাড়াও লিখে গেছেন অপ্রকাশিত বহু চিঠিপত্র ।
শরৎচন্দ্রের ভিটেতে প্রবেশ করলেই সর্বপ্রথম আপনার চোখে পড়বে তার আবক্ষ একটি প্রতিমূর্তি । ১৯৭৮ এর বন্যায় বেশ কিছুটা ক্ষতি হলেও বাড়িটির প্রতিটি ঘরে এখনও কথাসাহিত্যিকের ব্যবহৃত নানান জিনিস অক্ষত অবস্থায় রয়েছে । লেখার ঘরটিতে রয়েছে তার বসার চেয়ার ও লেখার টেবিল । চেয়ারের উল্টো দিকেই রয়েছে একটি জানলা যেখান থেকে অনতিদূরে রূপনারায়ণের প্রবাহ দেখে লেখক তার সাহিত্য সৃষ্টি করতেন । এছাড়াও ভিটেতে তার ব্যবহৃত আসবাবপত্র , বেলজিয়াম কাচের আয়না , রাইটিং স্ট্যান্ড , লাঠি , হুকো , বই রাখার জায়গা , বহু প্রাচীন ময়ূর পোশার ঘর , টিনের ছাউনি যুক্ত চার চালা ধানের গোলা - সহ রয়েছে একটি সভাঘর । স্বাধীনতার আগে এই সভাঘরেই কংগ্রেসের নানান মিটিং অনুষ্ঠিত হতো । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের মতো বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পদধূলিও পড়েছিল এই বাড়িটিতে । কথাশিল্পীকে চিত্তরঞ্জন দাসের দেওয়া একটি শ্বেত পাথরের কৃষ্ণমূর্তির নিত্যপুজো এখনও সম্পন্ন হয় বসতভিটেতে ।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একজন বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হিসেবেও সুপরিচিত ছিলেন । তার বসতভিটের মধ্যে অবস্থিত সেকালের দাতব্য চিকিৎসালয় টিতে আজও সংরক্ষিত করে রাখা রয়েছে নানান হোমিওপ্যাথি ওষুধ । উপরের চারিপাশ বারান্দা ঘেরা ঘরটির সামনে থেকে সুদৃশ্যমান গ্রাম ও রূপনারায়ণের প্রবাহ আপনার মন যে কাড়বেই কাড়বে , সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই ।
বাড়িটি এখনও পর্যন্ত ব্যক্তিগত মালিকানার থাকলেও পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন আইন অনুসারে বাড়িটিকে কয়েক বছর আগে হেরিটেজ বলে ঘোষণা করা হয় । কেয়ারটেকারের তদারকিতে প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে বেলা সাড়ে ১২ টা ও দুপুর তিনটে থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য খোলা থাকে বাসভবনের দরজা ।
যাবেন কিভাবে ? হাওড়া স্টেশন থেকে বাস ধরে দেউলটি তারপর সেখান থেকে অটো , টোটো বা ট্রেকার ধরে মেলাক বা সামতাবেড় অটো স্ট্যান্ড । সেখান থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার গেলেই পৌঁছে যাবেন শরৎচন্দ্রের এই বসত বাড়িতে । তবে কথাশিল্পীর বাড়ির একদম আশেপাশে সেরমভাবে থাকা ও খাওয়ার জায়গা না থাকলেও সেখান থেকে কিছুটা দূরে মেলাকের কাছেই রয়েছে বেশ কয়েকটি খাওয়া ও রাত্রিকালীন থাকার রিসর্ট ।
শান্তনু চক্রবর্তী
আরও পড়ুন: পুজোর ছুটিতে বেড়াতে যেতে চান? রইল অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের ঠিকানা...