দেশের প্রথম টায়ার কারখানা সাহাগঞ্জের ডানলপ নিলামে উঠেছে। এক সময় যাকে নিয়ে গর্ব ছিল গোটা রাজ্যের তথা দেশের। হুগলির সাহাগঞ্জে যে কারখানার শ্রমিকরা গর্বের সঙ্গে বলতেন, ‘আমরা ডানলপের শ্রমিক’। সেই কারখানা গত কয়েক বছরে শ্মশানে পরিণত হয়েছে। ছাবারিয়ার হাত বদল হয়ে রুইয়ার হাতে গেলেও ডানলপের ভবিষ্যৎ অন্ধকারেই ডুবে গিয়েছে ক্রমশ।
advertisement
আরও পড়ুনঃ এবার পুজোয় ট্রেন্ডিং কোরিয়ান কাগজের মালা! বাংলার শিল্পীদের কাজ যাচ্ছে ভিনরাজ্যেও
২০১১ সালে সাসপেনশানের নোটিস ঝোলে ডানলপে। কারখানার তিন শিফটে কাজ, শ্রমিকদের ব্যস্ততা – সব কোথায় যেন উধাও হয়ে গিয়েছে। শ্রমিকরা তাদের পিএফ, গ্রাচুইটি, বকেয়ার দাবি জানাতে থাকে। কাঁচামাল সরবরাহকারী অন্যান্য পাওয়াদাররা মামলা করে হাইকোর্টে। ২০১৭ সালে হাইকোর্টের নির্দেশে লিকুইডেশনে চলে যায় দেশের প্রথম এ্যারো টায়ার প্রস্তুতকারী কারখানা ডানলপ। এ রাজ্যের সাহাগঞ্জ ও তামিলনাড়ুর আম্বাতুরে ডানলপের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি নিলাম করে বকেয়া মেটাতে বলে কোর্ট।
ডানলপের শ্রমিক পরিবারগুলো যারা কোয়ার্টারে থাকে তারা আশায় ছিল, একদিন হয়তো আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু চোখের সামনে সমস্ত কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে যেতে দেখে সেই বিশ্বাসও ভেঙে গিয়েছে। শ্রমিকরা ও তাদের সন্তানরা বুঝতে শিখেছে যে কারখানায় কাজ করে তাদের পেট চলত এখন সেই কারখানা আর বাঁচানোর রাস্তা নেই। মঞ্চ বেঁধে ধর্না হয়েছে কিন্তু ডানলপের পরিস্থতির বদল হয়নি।
আরও পড়ুনঃ ‘এই’ জিনিস ছাড়া মায়ের পুজো অসম্পূর্ণ! পুজোর আগে বিপুল চাহিদা বাজারে, বিকল্প আয়ের দারুণ সুযোগ
বিশ্বকর্মা পুজো ছিল ডানলপ শ্রমিকদের কাছে দুর্গাপুজোর থেকেও বড় উৎসব। আলোর রোশনাই। খাওয়া দাওয়া শ্রমিকরা খুব আনন্দ করতেন। এখন সেসব অতীত। এক সপ্তাহ ধরে আয়োজন চলতো। ডানলপ কারখানার বিশ্বকর্মা পুজো ছিলো ওই এলাকার মানুষের কাছে আলাদা উন্মাদনা জায়গা। কারন ওই একটা দিন সাধারণ মানুষ কারখানার ভিতরে ঢুকতে পারতেন। নিজেদের চোখে প্রত্যক্ষ করে দেখতে পারতেন কীভাবে টায়ার তৈরি হয়। তবে ২০১১ সালে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে সব আলো নিভে যায়। পুজোর দিন মেলা বসত, খাওয়া দাওয়া হতো, নাটক থিয়েটার হতো। এখন সব অতীত। শ্রমিক যাদের রমরমা ছিল, তারা আজ দিন আনে দিন খায়।
তবে এখনো তাদের আশা, কারখানার জমিতে কারখানার হোক। ডানলপ পশ্চিম দিকে গেটের পাশেই রয়েছে ব্রিটিশদের লোহার পাতের লেখা ‘ডানলপ’। এসব কিছুই এখন বন জঙ্গল আর আগাছায় ঘিরেছে। বড় বড় গেটের গায়ে ধরেছে মরচে। তবুও কারখানার গেটে প্রণাম করে যান শ্রমিকরা। খুলুক ডানলপের গেট, আবার ডানলপ মাতুক বিশ্বকর্মা পুজোয়।
কারখানার অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক নির্মল সিং অসীম বোসরা বলেন, ‘বিশ্বকর্মা পুজো এলেই এখন মন খারাপ লাগে। আগে খুব আনন্দ করতাম। এখন সব যেন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। পুজোর দিনগুলো হইহই করে কাটতো। যাত্রা, থিয়েটার, খাওয়া-দাওয়া মেলা সব কিছুই হতো। পুজোর সময় কারখানায় অবাধ যাতায়াত করত সাধারণ মানুষ। এখন নিজেদেরই ঠিকভাবে দিন কাটছে না। মন ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে, চোখের কোনে নেমে আসে জল’।