TRENDING:

ভেঙেছে নদীর বাঁধ, নোনা জলে ডুবেছে বিঘার পর বিঘা কৃষি জমি, কবে ফের মাথা তুলবে সন্দেশখালি!

Last Updated:

আয়লার সময়ও চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকে গিয়ে কয়েক বছর সন্দেশখালির কৃষকরা চাষ করতে পারেননি। বুলবুলের সময় ক্ষতি হলেও তা আমফানের মত নয় বলছেন এখানকার কৃষকরা। দেখা গেল একের পর এক চাষের জমি নোনা জলে ভরে গিয়েছে।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#সন্দেশখালি: বাসিন্দারা বলছিলেন বুধবার দুপুর থেকেই শুরু হয়েছিল ঝড়। তারপরে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য বিরতি। দুপুরের ঝড়ে অবশ্য কিছু মালুম পড়েনি। কিন্তু বিকেলের পর থেকে ঝড়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে উড়ে গেল অসংখ্য বাড়ীর চাল, রাস্তার ধারে ধারে  কয়েকশো গাছ পড়ে গেল।গোটা সন্দেশখালির অবস্থা একই রকম।
advertisement

বুধবার সন্দেশখালি এলাকাজুড়ে এই ঘূর্ণিঝড় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে কয়েকটা দিন। অনেকটা কষ্ট করেই আমাদের পৌঁছাতে হয়েছিল সন্দেশখালি এলাকাতে।একাধিক রাস্তা গাছ পড়ে বন্ধ থাকায় শেষমেষ আমাদের বসিরহাটের ন্যাজাট থেকে কোনরকমে একটি লঞ্চ ভাড়া করে পৌঁছাতে হয়েছে সন্দেশখালিতে।যেতে অবশ্য কম সময় লাগেনি। নদীর স্রোতকে উপেক্ষা করে দু'ঘণ্টা পৌঁছাতে লেগেছে সন্দেশখালিতে। নদীগুলো তখনও ফুঁসছিল। লঞ্চ তীরে যেতে যেতে সন্দেশখালি এলাকাতে ঢুকতেই দেখা মিলল তাণ্ডবলীলার ছবি। গত বুধবারের বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় কিভাবে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে তার নদীর দুদিক দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।  যেতে যেতেই নদী সংলগ্ন একটি গ্রামে কিছুক্ষণের জন্য  নামলাম।হেঁটে হেঁটে যতটাই এগোচ্ছি যেদিকেই চোখ যাচ্ছে দেখা যায় একটা মাটির বাড়ি চাল  আস্ত নেই। নদীর ধারেই গত কয়েকদিন ধরে রাত কাটাচ্ছেন এখানকার গ্রামবাসীরা। প্রশাসনের তরফে এখনও পর্যন্ত এই গ্রামে কোন ত্রাণ পৌঁছায়নি।

advertisement

সেই গ্রাম কিছুক্ষণ থেকে আবার সন্দেশখালি জেটির দিকে যাওয়া শুরু করলাম। সন্দেশখালি জেটিতে গিয়ে পৌঁছানো মাত্রই দেখা মিলল একাধিক জায়গায় সন্দেশখালির নদীর বাঁধ ভেঙেছে। কিভাবে নদীর বাঁধ গুলি একে একে ভেঙে পড়েছে তা ছবি দেখলেই বোঝা যাচ্ছিল। বুধবার নদীর বাঁধ গুলো ভেঙ্গে এভাবেই গ্রামগুলির ভেতর জল ঢুকে গেছে। প্রশাসনের তরফে আগে থেকেই সতর্ক বার্তা থাকায় বাড়ি গুলিতে অবশ্য ছিল না কোন গ্রামবাসী। আয়লার পর রাজ্য সরকারের তরফে ঘূর্ণিঝড় সেন্টার করে দেওয়ায় সেই সেন্টারেই আশ্রয় নিয়েছিলেন এখানকার গ্রামবাসীরা।

advertisement

সন্দেশখালির এই গ্রামগুলিতে যতটাই এগোনো যাচ্ছে নদীর বাঁধ বরাবর দেখা যাচ্ছে  তান্ডব লীলার ছবি। এমন কোনও বাড়ি নেই যা দেখতে পেলাম মোটের উপর ঠিক রয়েছে। কাঁচা বাড়ি, মাটির বাড়ি, টিনের বাড়ি সব রকমের বাড়ি বুধবারের ঘূর্ণিঝড়ে ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। ইতস্তত পড়ে থাকা টালি খুঁজছেন অনেকে যদি কোনটা আস্ত মেলে। আবার কেউ গ্রামের চারিপাশে অ্যাসবেস্টস, টিনের ছাউনি কুড়িয়ে আনছেন যাতে ছাদগুলিতে আবার ঢাকা দেওয়া যায়।

advertisement

কয়েক হাজার মানুষের বাস গোটা সন্দেশখালি জুড়ে। প্রশাসন সূত্রে খবর সন্দেশখালির বেশিরভাগ বাড়ি নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বুধবারের আমফানের তাণ্ডবে। যদিও পুরো ক্ষয় ক্ষতির হিসেব এখনো চালাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। বিঘের পর বিঘে চাষের ক্ষেত মিশে গিয়েছে নোনা জলে। যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে একাধিক সবজি। সবে আয়লা তারপর বুলবুল ঝড়ের দাপট সরিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা করছিল এই সন্দেশখালি। আয়লার সময়ও চাষের জমিতে নোনা জল ঢুকে গিয়ে কয়েক বছর সন্দেশখালির কৃষকরা চাষ করতে পারেননি। বুলবুলের সময় ক্ষতি হলেও তা আমফানের মত নয় বলছেন এখানকার কৃষকরা। দেখা গেল একের পর এক চাষের জমি নোনা জলে ভরে গিয়েছে। এক বাসিন্দা সঙ্গে কথা বলতে বলতে তিনি বলছেন " যেভাবে এই জমি গুলিতে নোনা জল ঢুকেছে অনেকেই বলবেন এটা মাছের ভেড়ি। কিন্তু আদতে এখানে আমরা ধান চাষ শুরু করেছিলাম। জমির যা অবস্থা ২‐৩ বছরেও এই জমিতে আমরা চাষ করতে পারব নাকি জানি না।"

advertisement

গ্রামের মানুষরা জানাচ্ছিল প্রথমে ঝড় এসেছিল পূর্ব দিক দিয়ে। তারপর কিছুক্ষণ বিরতি থাকার পর আবার উত্তর দিক দিয়ে ঝড় আসা শুরু করলো। সে সময় নদীর জলোচ্ছ্বাস এতটাই ছিল যে বাড়ি গুলোর উপরে এসে জলের তোর ভাঙছিল। তবে দু'ঘণ্টা ধরে সেই ভয়ানক ঝড় চললেও আরও যদি বেশীক্ষণ থাকত তাহলে বাঁধ বলে কিছুই থাকত না সন্দেশখালিতে।

ঝড়ের পর পার হয়ে গেছে পাঁচ দিন। এখনো অন্ধকারে ডুবে গোটা এলাকা। পঞ্চায়েত থেকে সামান্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সেটাও পর্যাপ্ত নয়। ত্রাণের খাবার, জল কিছুই আসেনি এমনটাই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। এক গ্রামবাসী সোমা দাস বলেন " আমার স্বামী অনেক টাকা ধার করে চাষ করা শুরু করেছিল। বুধবারের ঝড়ে সব শেষ। কিভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবে বুঝতে পারছি না।"

সন্দেশখালির বেশিরভাগ জায়গাতেই নদীর বাঁধ ভেঙেছে। কয়েকদিন চলে যাওয়ার পরেও এখনো পর্যন্ত সেই বাঁধ সংস্কারের কাজ প্রশাসনের তরফে শুরু করা হয়নি। গ্রামবাসীরা প্রশাসনের অপেক্ষা না করে বাঁধ সারাই এর কাজ শুরু করেছেন। যদিও বাছাইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রশাসনের তরফে পাঠানো হচ্ছে। বাঁধ সারাই করতে করতে এক গ্রামবাসী আমাদের লক্ষ্য করে বলেন " বাবু এইভাবে আর কতদিন চলবে? ঝড় হলেই এখানে বাঁধ ভেঙে যায়। আবার সেই বাঁধ তৈরির কাজ আমাদেরই হাত লাগাতে হয়। আমাদের এই ক্ষতির কেউ ক্ষতিপূরণ দেবে তো?" গোটা সন্দেশখালি যেন এখন বুধবারের ঝড়ের আতঙ্কে রয়েছে। অনেকেই সেই ঝড়ের আতঙ্ককে দূরে সরিয়ে রেখে সামনের দিকে এগোতে চাইছেন। কিন্তু প্রশ্নটা হল আয়লা,বুলবুল, ফনির পর এবার কি আমফান কে দূরে সরিয়ে রেখে সন্দেশখালি এগোতে পারবে? চোখেমুখে সন্দেশখালির গ্রামবাসীদের কাছে এখন এটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
শীতের মরশুম এলেই গৃহবধূদের উপরি রোজগার! সংসার সামলে ছুটছেন মোয়ার দোকানে
আরও দেখুন

সন্দেশখালি থেকে সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়

Click here to add News18 as your preferred news source on Google.
কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের সব লেটেস্ট ব্রেকিং নিউজ পাবেন নিউজ 18 বাংলায় ৷ থাকছে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের খবরও ৷ দেখুন ব্রেকিং নিউজ এবং সব গুরুত্বপূর্ণ খবর নিউজ 18 বাংলার লাইভ টিভিতে ৷ এর পাশাপাশি সব খবরের আপডেট পেতে ডাউনলোড করতে পারেন নিউজ 18 বাংলার অ্যাপ ৷ News18 Bangla-কে গুগলে ফলো করতে  ক্লিক করুন এখানে ৷ 
বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
ভেঙেছে নদীর বাঁধ, নোনা জলে ডুবেছে বিঘার পর বিঘা কৃষি জমি, কবে ফের মাথা তুলবে সন্দেশখালি!
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল