পটে আঁকা দুর্গা। নাম তাই পটেশ্বরী। আগে পুজো হত দুর্গা দালানে। পরে পুজো শুরু হয় বর্ধমান রাজবাড়ির লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে। পট বদল হয় না। বারো বছর অন্তর পটের অঙ্গরাগ হয়।
রাজবাড়ির শরীর চুঁয়ে পড়া আভিজাত্যে আজ সময়ের নির্মম থাবা। ইতি-উতি ভেঙে পড়া খিলান, ধুসর শ্বেতপাথরের মেঝেতে কত না-বলা রাজকাহিনী।
রাজবাড়ির কুলদেবতা লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ এবং কেশব জিউ। কুলদেবী মা চন্ডিকা। অন্য প্রতিমার পুজো অসম্ভব। কুলপুরোহিতের কড়া বিধান। রাজার ইচ্ছে দুর্গাপুজো। অগত্যা পটে আঁকা দুর্গায় পুজো শুরু রাজবাড়িতে। দাঁইহাট থেকে শিল্পী আনিয়ে পট আঁকান মহারাজ মহাতাবচাঁদ। এলাকার একমাত্র দুর্গা আরাধনা। আশপাশের গ্রামের সকলেই ভিড় করতেন রাজবাড়ির পটেশ্বরীর পুজোয়। তিনশো বছরের বেশি সময় ধরে পটেশ্বরী দুর্গা পুজো পাচ্ছে বর্ধমান রাজবাড়ির লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে।
advertisement
সেই রাজ আড়ম্বর আজ ইতিহাস। ভেঙে পড়া সাত-মহলা শুধুই ধুসর স্মৃতি। সংস্কারহীন জরা-জীর্ণ মন্দির। কাঁচ ভাঙা ঝাড়লণ্ঠনের আবছা আলোয় ফিরে দেখা সোনালি ইতিহাস।
পটের পিছনের চালচিত্রে নানা পৌরাণিক কাহিনী। পুজো শুরু প্রতিপদ থেকে। চলে ন’দিন ধরে। আগে একশো ঢাকের শোভাযাত্রায় ঘট আসত কৃষ্ণসায়র থেকে। এখন গঙ্গাজলে ভরে ঘট। সেদিনের সুপারি বলি এখন বন্ধ। তবে আজও নবমীতে কুমারী পুজো হয়।
প্রথমে খিচুড়ি ভোগ। পরে মেলা। রাতে যাত্রা দেখে পালা গান শুনে ভোরে বাড়ি ফেরা। প্রজারা ছাড়াও আসতেন বন্ধু জমিদার ও রাজারা । আজও সস্ত্রীক পুজো দিতে আসেন রাজকুমার প্রণয়চাঁদ মহাতাব । গুজরাতিদের নবরাত্রি আসর বসে মন্দির প্রাঙ্গনে। নয় রাত ধরে চলে ডান্ডিয়া নাচ। সময়ের প্রলেপ সত্ত্বেও ঐতিহ্যে ব্যতিক্রমী বর্ধমানের পটেশ্বরী দুর্গা।