পুজোর ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, আজ থেকে প্রায় ৪০০-৪৫০ বছর আগে এই পুজোর সূচনা হয়। সে সময় তাম্রলিপ্ত নগরীর রাজা তাম্রধ্বজের ব্যবস্থাপক ছিলেন পূর্বপুরুষ স্বার্থকরাম। স্বার্থকরামের মা পাশের কোনও এক জায়গায় পুজোর অঞ্জলি দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে ভিখারি বামুনের বউ বলে অপমান করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। চোখে জল নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে আসেন স্বার্থকরামের মা। সেই জল সহ্য করতে পারেনি স্বার্থকরাম। মায়ের চোখের জল নিবারণ করতে পরের বছর থেকেই একচালা সাবেকি মূর্তিতে দেবী দুর্গার পুজো শুরু করেন স্বার্থকরাম।
advertisement
এই পুজোর একাধিক বিশেষত্ব রয়েছে। প্রত্যেক বছর জন্মাষ্টমীর দিন ঠাকুরদালান থেকে কিছুটা দূরে ছাতিমতলা থেকে প্রতিমার মাটি তোলা হয়। ঠাকুরদালানের পিছন দিকে রয়েছে পরিবারের কুলদেবতা গোকুলচাঁদ জিউর মন্দির। বৈষ্ণব মতে মা এখানে পূজিতা হন। তাই কোনও প্রকারের বলি এখানে হয় না।
আরও পড়ুনঃ দুর্গাপুজোয় থিমের চাকচিক্যে গ্রাম বাংলার ছোঁয়া! পুজোর চার দিন মায়ের জন্য বিশেষ ভোগ
ভোগেও রয়েছে বিশেষত্ব। দেবীর আরাধনায় ষষ্ঠীর দিন দেওয়া হয় এক মন ছয় সের চালের নৈবেদ্য ও ভোগ, সপ্তমীর দিন এক মন সাত সের চালের, অষ্টমীর দিন আট মন আট সের চালের এবং নবমীর দিন নয় মন নয় সের চালের ভোগ ও নৈবেদ্য দেওয়া হয়। ভোগে ভাত ছাড়াও থাকে পোলাও, খিচুড়ি, বিচে কলার ছেঁচকি। এছাড়াও দেবীর ভোগে থাকে বড়ি ও আমচূরের টক।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
পরিবারের অন্যতম সদস্য সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন পূর্বপুরুষ স্বার্থকরাম। তিনি তার মায়ের চোখের জল মুছিয়ে দিতে পুজোর প্রচলন শুরু করেন। প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে সেই পুজো হয়ে আসছে। পুজোর বিশেষত্ব হল আন্তরিকতা। এখনও পর্যন্ত বাড়ির সমস্ত সদস্যরা যে যত দূরেই থাক পুজোর সময় ঠিক ব্যাবত্তাবাটিতে এসে হাজির হন। পুজোর কয়েকদিন ঠাকুরদালানে বসে সংগীতের আসর। গোটা ব্যাবত্তাহাটের মানুষজন এই পুজোয় মেতে ওঠেন’।
মায়ের চোখের জল মোছাতে চিন্ময়ী মায়ের আরাধনা শুরু করেছিলেন ব্যবত্তাবাটির পূর্বপুরুষ স্বার্থকরাম। আমচুরের টক ও বড়ি দিয়েই ভোগ দেওয়া হয় চিন্ময়ী মাকে। মায়ের প্রসাদ পেতে প্রতিদিন ভিড় জমান বহু মানুষ। নবীন ও প্রবীণদের মিলিত প্রয়াসে পুরানো ঐতিহ্য বহন করে আজও জমজমাট নন্দকুমারের ব্যবত্তাবাটির বনেদি বাড়ির পুজো।