আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে ১৯ বছরের তরুণীকে নির্যাতন করে খুনের অভিযোগ! নর্দমা থেকে উদ্ধার বিব*স্ত্র দেহ
প্রখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী সব্যসাচী পালের নেতৃত্বে একদল বাঙালি জ্যোতির্বিজ্ঞানী সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন ৩৬৯টি রেডিও কোয়াজার যার মধ্যে ৫৩ টি দৈত্যাকার রেডিও কোয়াজার। নব্য আবিষ্কৃত কোয়াজারগুলি প্রায় ০.২ থেকে ৭.২ মিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত প্রসারিত। অর্থাৎ নিজেদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে (Milkyway) এর মতো ৫০ টি গ্যালাক্সি এর মধ্যে পাশাপাশি থাকতে পারবে। বেশ কয়েকদিন আগে মহাকাশে রেডিও গ্যালাক্সি দিয়ে তাক লাগিয়েছিলেন এই গবেষকেরা। তবে দীর্ঘ বেশ কয়েক বছরের চেষ্টায় ভারতীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই অসাধারণ খোঁজ। গবেষকদের কথায়, যেই সকল গ্যালাক্সি থেকে বেতার তরঙ্গ বা রেডিও সিগন্যাল নির্গত হয় তাদের রেডিও গ্যালাক্সি বলে। প্রত্যেকটি রেডিও গ্যালাক্সির কেন্দ্রস্থলে থাকে এক বা একাধিক বিশাল ভরবিশিষ্ট ব্ল্যাক হোল (super-massive black hole)। এই ব্ল্যাক হোলের কাছের অঞ্চল থেকে দুই দিকে জেট নির্গত হয় যা প্রধানত রেডিও তরঙ্গে দৃশ্যমান। এই জেট বিশিষ্ট রেডিও গ্যালাক্সিগুলি প্রায় গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ে (Milkyway) থেকে আকারে অনেকটাই বড় হয়। গবেষক সৌভিক মানিক ও নেতাই ভূক্তা বলেন, কোয়াজার (Quasar) বা কোয়াসি স্টেলার অবজেক্ট (quasi stellar object) হল এক বিশেষ ধরনের রেডিও গ্যালাক্সি যার কেন্দ্রস্থলে সূর্যের ভরের দশ মিলিয়ন থেকে এক বিলিয়ন গুণ ভর বিশিষ্ট বিশালাকার ব্ল্যাক হোল থাকে। এই বিশাল ভরবিশিষ্ট ব্ল্যাক হোলগুলি আশপাশের গ্যাস ও ধুলো আকর্ষণ করে এক জ্বলন্ত উজ্জ্বল ডিস্ক তৈরি করে।
advertisement
গবেষকদের আরও দাবি, সব কোয়াজারই রেডিও তরঙ্গ নির্গত করে না। কেবলমাত্র খুব অল্প সংখ্যক কোয়াজার শক্তিশালী রেডিও বিকিরণ করে এবং তার মধ্যেও আরও ক্ষুদ্র একটি অংশ প্রদর্শন করে মিলিয়ন আলোকবর্ষ জুড়ে প্রসারিত বিশাল জেট, যেগুলিকে বলা হয় Giant Radio Quasars (GRQs) বা দৈত্যাকার রেডিও কোয়াজার। পুণের উত্তরে প্রায় ৯০ কিমি দূরে খোদাদ গ্রামে অবস্থিত জায়ান্ট মিটারওয়েভ রেডিও টেলিস্কোপ (GMRT) ব্যবহার করে ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে GMRT দৃশ্যমান ৯০% আকাশজুড়ে ১৫০ MHz-এ একটি বিশাল সমীক্ষা চালায়, যা TGSS নামে পরিচিত। TGSS-এর নিম্ন-ফ্রিকোয়েন্সির DATA ব্যবহার করে চার বিজ্ঞানী এই বিরল ও বিশালাকার রেডিও উৎসগুলিকে শনাক্ত করেন।
মহাকাশ বিজ্ঞানী সব্যসাচী পালের নেতৃত্বে এই আবিষ্কারের মূল কাজ করেছেন দুই তরুণ বৈজ্ঞানিক মেদিনীপুর সিটি কলেজের সৌভিক মানিক এবং সিধো কানু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. নেতাই ভূক্তা। এই গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সিধো কানু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সুশান্ত কুমার মণ্ডল। গবেষক সৌভিক মানিক ও নেতাই ভূক্তা বলেন, “এই রেডিও জেটগুলির আকার কোনও সৌরজগৎ বা গ্যালাক্সির সঙ্গে তুলনীয় নয়, আমরা আবিষ্কার করেছি এমন কাঠামো, যা একসঙ্গে ২০ থেকে ৫০টি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সমান দীর্ঘ। প্রতিটি কোয়াজারের কেন্দ্রে থাকে এক বিশাল ব্ল্যাক হোল, যা আশেপাশের পদার্থকে নিজের দিকে টেনে নেয়। এই পদার্থ যখন ব্ল্যাক হোলের দিকে ঘূর্ণায়মান হয়ে পতিত হয়, তখন তা প্রচণ্ড তাপে আয়নিত হয়ে যায় এবং ডিস্কের কেন্দ্রে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। এই ক্ষেত্রগুলি প্লাজমাকে আলো-গতির কাছাকাছি বেগে ত্বরান্বিত করে ব্ল্যাক হোলের দুই মেরুর দিক থেকে ছুঁড়ে দেয়, তৈরি হয় দুটি বিরাট রেডিও জেট, যা কোটি কোটি বছর ধরে মহাকাশে প্রসারিত হয়ে রেডিও লোব গঠন করে।”
এই গবেষণার নেতৃত্ব তথা সিটি কলেজের অধ্যাপক বিজ্ঞানী ড. সব্যসাচী পাল মন্তব্য করেছেন, “এই জায়ান্ট কোয়াজারগুলি বোঝাতে সাহায্য করে কী ভাবে রেডিও গ্যালাক্সিগুলির শেষ পর্যায়ের বিবর্তন ঘটে এবং তারা যে ইন্টারগ্যালাকটিক মিডিয়ামে (IGM) প্রসারিত হয়, তার প্রকৃতি কেমন। তবে এই বিশাল কাঠামোগুলি খুঁজে বের করা সহজ নয়। দুটি লোবকে যুক্ত করা ক্ষীণ রেডিও ‘ব্রিজ’-এর উজ্জ্বলতা প্রায়ই সীমার নিচে চলে যায়, ফলে গঠনটি ভাঙা বা অসম্পূর্ণ মনে হয়। এজন্যই নিম্ন-ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও পর্যবেক্ষণ বিশেষ কার্যকর।”
গবেষকরা আরও লক্ষ্য করেন যে দূরবর্তী (রেড শিফ্ট z ≥ 1) জায়ান্ট কোয়াজারগুলিতে জেটের অসমতা (asymmetry) বেশি। মনে রাখতে হবে অধিক দূরবর্তী কোয়াজারগুলি আসলে অনেক প্রাচীন কালে সৃষ্ট গ্যালাক্সি। সম্ভবত প্রাচীন মহাবিশ্বের ঘন ও অস্থির গ্যাসের কারণে এই সব গ্যালাক্সির জেটের দিক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল।
