বায়রনের তৃণমূলে যোগ নিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করতে গিয়ে প্রথমেই অভিষেক বলেন, ‘‘বায়রন আজ যোগ দিল তৃণমূলে। সাগরদিঘি উপ নির্বাচনে আশীর্বাদ নিয়েছে৷ বিধানসভায় শপথ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন৷ আমার সাথে মুর্শিদাবাদে জনসংযোগ যাত্রায় ওনার কথা হয়েছে। আজ ঘাটালে এসে যোগ দিলেন উনি৷ লড়াই সর্বাত্মক বলে উনি তৃণমূল যোগ দিলেন। আশা করি, বিজেপির বিরুদ্ধে জোর গলায় কথা বলবেন।’’
advertisement
তবে, এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বেরও তুমুল সমালোচনা করেন অভিষেক৷ বলেন, ‘‘রামধনু ভোটের জোট হল শূন্য৷ ওরা কার সুবিধা করেছিল সেটা সবাই দেখেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসকে সুবিধা করে দিয়েছিল। আর অধীর চৌধুরী সুবিধা করে দিয়েছিল। কংগ্রেস যদি ভাবে এখানে সমালোচনা করব, আক্রমণ করব আর ওখানে গিয়ে বলবে আমাদের কথা শুনবে না৷ সেটা হতে পারে না। অধীর চৌধুরী কাকে মদত দিচ্ছেন? ভোট কার দিকে ট্রান্সফার হয়েছে। মনোজ চক্রবর্তী আসন কী হয়েছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমর্থন করছেন৷ আর উনি ভোট কাটছেন৷’’
অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, ভয় দেখিয়েই নাকি বায়রনকে নিজেদের দিকে টেনেছে তৃণমূল৷ কংগ্রেস নেতার কথায়, ‘‘বাইরন সম্পর্কে আমার আগেও কোনও খারাপ ধারণা ছিল না, এখনও নেই। কিন্তু, দিদি যে দল ভাঙানোর খেলায় সিদ্ধহস্ত, তা সারা ভারত জানে। যে খেলা আপনি শুরু করেছেন, মিলিয়ে নেবেন, সেই খেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আপনিই। আর কিছু দিনের মধ্যেই আপনার দল ভেঙে চৌচির হয়ে যাবে৷’’
অন্যদিকে, অভিষেকের পাল্টা তোপ, ‘‘অধীর বাবু খেলাটা কী? আমার দল ভাঙার হলে আমি মুর্শিদাবাদে গিয়ে ভাঙতাম। কাল বোতাম টিপলে চার কংগ্রেস সাংসদ আসবে। শুধু বাংলার নয়, ভিন রাজ্য আছে। উনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন৷ এক মাসে দেখিয়ে দেব৷ আমাকে দল অনুমোদন দিলে আমি বহরমপুরে দাঁড়িয়ে যাব৷ দল আমাকে দিক।’’
প্রসঙ্গত, কংগ্রেস নিয়ে কদিন আগেই উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল তৃণমূলনেত্রীকে ৷ কর্ণাটক নির্বাচনে কংগ্রেসের জয়ের পরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমরা হিসাব করে দেখেছি, যে ২০০টা আসনে কংগ্রেস শক্তিশালী, তারা সেখানে লড়ুক, আমরা তাদের সমর্থন করব৷ কিন্তু, তাদেরও অন্য দলকে সমর্থন করতে হবে৷ আমরা কর্ণাটকে আপনাদের সমর্থন করব, আর আপনারা পশ্চিমবঙ্গে আমাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, নীতি এমন হওয়া উচিত নয়৷ যদি ভাল কিছু করতে চান, তবে কিছু জায়গায় ত্যাগ স্বীকার তো করতেই হবে৷’’
চব্বিশের নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী দলগুলি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ তৈরি করতে কোমর বেঁধে নেমেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার৷ ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ বিজেপি বিরোধী একাধিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নীতীশ৷ কোথাও কোথাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরজেডি নেতা তথা লালু পুত্র তেজস্বী যাদব৷
আরও পড়ুন: কংগ্রেসের বড় ধাক্কা! অভিষেকের হাত ধরে তৃণমূলে এলেন বায়রন বিশ্বাস
সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শেই বিরোধী দলগুলির একটি যৌথ বৈঠকের আয়োজন করছেন নীতীশ৷ আগামী ১২ জুনের ওই বৈঠকের যৌথ আয়োজক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ নেতা নীতীশ কুমার এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। এই বৈঠকে মমতা তো বটেই, যোগ দেওয়ার কথা কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেরও।
কিন্তু, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের একটি মাত্র বিধায়কের এভাবে তৃণমূলের যোগ দেওয়ার পরে, জাতীয় স্তরে তার প্রভাব কংগ্রেস-তৃণমূলের সম্পর্কে কতটা পড়বে বা আদৌ পড়বে কি না, সেটা বলবে সময়ই৷
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সাগরদিঘি আসনটিতে উপ নির্বাচন বয়। ২রা মার্চ প্রকাশিত হয় ফলাফল৷ দেখা যায়, সেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয় বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস৷ এমনকি, বিজেপির কিছু ভোটও বায়রনের পক্ষে গিয়েছিল বলে গুঞ্জন ওঠে৷ তবে জল্পনা শুরু হয়, যখন বায়রনের সঙ্গে দেখা করার পরে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, জয়ী বিধায়ক তাঁকে বলেছেন তিনি তৃণমূলেরই লোক৷