মুখোশ আঁকছিলেন রাজু সূত্রধর। আঁকছিলেন দুর্গার মুখ। ইদানীং মন বশে থাকে না। মাথায় ভিড় করে রাজ্যের চিন্তা।
মহাজনের টাকা মেটানোর চিন্তা। খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার চিন্তা, অন্যমনস্ক করে দেয়। কার্তিক মাস পরলেও, দিনের বেলা বেশ গরম।
খোলা দরজা দিয়ে রোদের হলকা আসে, ঘরটায়। সেই আলোতেই ঝলমল করে জরি-চুমকি। চকমকি মুখোশ।
মুখোশের গ্রাম, চড়িদা। বাঘমুণ্ডি থেকে কিলোমিটার তিনেকের পথ। অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে, শ'খানেক পরিবারের বাস।
advertisement
বাপ-ঠাকুর্দাকে দেখে শেখা। বংশ পরম্পরায়, মুখোশ বানান চড়িদার শিল্পীরা। ছৌ-নাচের মুখোশ। কারও কারও ছৌ-নাচের দলও আছে।
নাচিয়েদের মুখ ঢাকে মুখোশে। ঝকমকি সাজে। চড়িদা সাজায়। অযোধ্যা পাহাড় ঘুরতে এলে, চড়িদা আসেন পর্যটকেরা। ঘর সাজানোর জন্য মুখোশ কেনেন। দুর্গা, গণেশ। রাম-সীতা। সাঁওতাল পরিবারের মুখ। আলো করে শহরের ড্রয়িংরুম।
আপাতত চড়িদার দু-চোখে অন্ধকার। মাস আটেক হয়ে গেল। করোনার ধাক্কায়, ব্যবসা বন্ধ। লকডাউনের পর থেকেই কেউ আসে না। বিক্রিও হয় না।
পুজোর সময়, কলকাতার কত বারোয়ারি বরাত দেয়। প্যান্ডেল সাজে চড়িদার শিল্পীদের ছোঁয়ায়। আর চৈত্র মাসে। গাজনের সময়। তখন মুখোশের দারুণ কদর। জটাজুটো ভোলানাথ, নন্দী-ভৃঙ্গি, সাজে কত না মানুষ।
এবছর সব পণ্ড। পুজোয় বরাত নেই। গাজনেও গাঁয়ে আসবে না খরিদ্দার। শিল্পীরা ভাবেন, মহাজনের থেকে চড়া সুদে ধার করা টাকা! কীভাবে মেটাবেন?
পরিমল দত্ত, মুখোশ শিল্পী
কলকাতা ফিতে ফেলে মাপছে। হিসেব কষছে ঠাকুর দেখার দূরত্ব। ঠিক-বেঠিক। বেঠিক-ঠিকের তর্কে মশগুল। আর চড়িদা, হিসেব কষছে জীবনে। চাল-ডাল-হেঁশেলের।
যন্ত্রের মতো, দুর্গার মুখ আঁকেন রাজু। দুর্গা, শুধু, ড্যাবডেবিয়ে তাকিয়ে থাকেন।