সরকারি হাসপাতালের এই চিকিৎসককেই বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের বাড়িতে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছিল বলে অভিযোগ৷ অনুব্রত মণ্ডল কার্যত জোর করে তাঁকে দিয়ে সাদা কাগজে বেড রেস্টের কথা লিখতে বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই চিকিৎসক৷
গত ২৩ জুলাই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি৷ আদালতের নির্দেশ মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে পরীক্ষার পর রাজ্যের তৎকালীন মন্ত্রীকে ভর্তি নিয়ে নেওয়া হয়৷ এর পরেই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ইডি৷ এসএসকেএম হাসপাতাল বিভিন্ন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শাসক দলের নেতাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টও৷ হাইকোর্টের নির্দেশেই গত ২৫ জুলাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ভুবনেশ্বরের এইমস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷
advertisement
আরও পড়ুন: মাধ্যমিকে দ্বিতীয়, উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম! অনুব্রতকে দেখা চন্দ্রনাথ বলছেন, 'মেরুদণ্ড বেঁকাতে পারব না'
সেখানকার চিকিৎসকরা পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পরীক্ষা করে জানিয়ে দেন, তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন নেই৷ ঘটনাচক্রে সেদিনই এসএসকেএম নিয়ে ফেসবুকে নিজের হতাশা ব্যক্ত করেন হাসপাতালের প্রাক্তনী চন্দ্রনাথ৷
পড়াশোনায় বরাবর মেধাবী চন্দ্রনাথ নিজেই জানিয়েছেন, তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছিলেন৷ উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হন৷ জয়েন্ট এন্ট্রান্সের গোটা রাজ্যে ক্রমতালিকায় তাঁর স্থান ছিল ২২৷ পরবর্তী সময়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন৷
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করার পর কলকাতার বি সি রায় হাসপাতাল থেকে শিশুরোগ চিকিৎসায় ডিপ্লোমা পাস করেন চন্দ্রনাথ৷ এর পর এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে জেনারেল সার্জারিতে স্নাতকোত্তর পাস করেন এই চিকিৎসক৷ গত ২৫ জুলাই ফেসবুকে চন্দ্রনাথ লেখেন, 'এসএসকেএম থেকে এমএস (মাস্টার্স ইন সার্জারি) করেছি, এখন মানুষকে বলতে লজ্জা লাগে৷'
আরও পড়ুন: অনুব্রতর বাড়িতে কার নির্দেশে সরকারি চিকিৎসক? এবার কড়া পদক্ষেপ স্বাস্থ্য দফতরের
ঘটনাচক্রে েসই এসএসকেএম হাসপাতাল অনুব্রত মণ্ডলকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরই তৃণমূল নেতার বাড়িতে পাঠানো হয় চন্দ্রনাথকে৷ বোলপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার বুদ্ধদেব মুর্মু তাঁকে এই নির্দেশ দেন বলে দাবি ওই চিকিৎসকের৷ সাদা কাগজেই প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার কথাও বলেন হাসপাতালের সুপার৷ নিজের দাবির সপক্ষে হাসপাতাল সুপারের সঙ্গে নিজের কথোপকথনের একটি রেকর্ডিং সংবাদমাধ্যমকে দিেয়ছেন চন্দ্রনাথ৷ যদিও সেই অডিও ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি নিউজ ১৮ বাংলা৷
চন্দ্রনাথের দাবি, তিনি কোনওদিনই অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেন না৷ কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল প্রভাবশালী বলেই তাঁর অনুরোধ মতো সাদা কাগজে বেড রেস্টের কথা লিখতে বাধ্য হন৷ পরে অবশ্য ওই চিকিৎসক দাবি করেন, কলকাতায় গিয়ে সিবিআই-এর সামনে হাজিরা দেওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছেন অনুব্রত৷ চন্দ্রনাথের কথায়, 'আমি নিজের মেরুদণ্ড বিক্রি করতে পারব না৷'
চন্দ্রনাথ অধিকারী অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করার পর আরও চাপে পড়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেতা৷ তাঁর এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করতে পারে সিবিআই-ও৷ আপাতত গোটা রাজ্যেই পরিচিত নাম হয়ে গিয়েছেন বোলপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের এই চিকিৎসক৷