বাড়ির পাশেই দেবী দুর্গার আর এক রূপ দেবী চামুণ্ডা আছেন। সে-জন্যই মন্তেশ্বরের চৌধুরী বাড়ির কয়েকশো বছরের প্রাচীন এই পুজোয় মাটির প্রতিমা আনা হয় না। পুজো হয় নবপত্রিকায়। পারিবারিক এই পুজোয় সামিল হন এলাকার বাসিন্দারাও। চারদিন ধরে চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান।
আরও পড়ুন: মহালয়ার সাত দিন আগেই মা দুর্গার বোধন হয় আমাদপুরের চৌধুরি বাড়িতে
advertisement
মুর্শিদাবাদের কাঠালিয়ার জমিদারি ছেড়ে নবকুমার চৌধুরি বর্ধমান রাজার অধীনে জমিদারি নেন। সেই সূত্রেই মন্তেশ্বরে গড়ে ওঠে এই জমিদার বাড়ি। তখন থেকেই শুরু হয় দুর্গাপুজো। পরবর্তীকালে বংশ পরম্পরায় এই পুজো শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরি,রামলাল চৌধুরি, গোপীবল্লভ চৌধুরি, গৌরপদ চৌধুরি ও নিত্যানন্দ চৌধুরিদের আমলে আরও জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: পর্যটকদের পথ চেয়ে দুর্গার মুখ এঁকে চলেছে বাগমুন্ডির মুখোশের গ্রাম চড়িদা
পরিবারের বর্তমান সদস্যরা জানালেন, '' জমিদারি আমলে পুজোর রমরমা ও জৌলুস ছিল নজরকাড়া। সেইসময় একমাস ধরে এলাকার মানুষজনকে নিয়ে চলত ভোজবাজিও। পুজো উপলক্ষ্যে লাঠিখেলা ও নারকেল কাড়াকাড়ির মত আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানও হত। দানধ্যানও ছিল অনেক।পরবর্তীকালে জমিদারি চলে গেলেও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আজও রয়েছে সেই আভিজাত্যের ছাপ ও আন্তরিকতা। পুজো বাড়িতে থাকা সুউচ্চ নজরকাড়া বিশাল দুর্গামন্দির ভেঙে যাওয়ায় বর্তমানে প্যান্ডেল তৈরি করে পুজো করা হয়।''
চৌধুরি বাড়ির কাছেই রয়েছে গ্রাম্যদেবী মা চামুন্ডার মন্দির ও মূর্তি। দেবী চামুন্ডা যেহেতু দেবী দুর্গারই আর এক রূপ তাই কোনও মৃন্ময়ী মূর্তি আনা হয় না চৌধুরী বাড়িতে। দুর্গাপুজোয় দেবী চামুণ্ডার ঘট আনার সময় চৌধুরী বাড়ির সদস্যরাও মঙ্গল ঘট আনেন। পরিবারের সদস্যরা জানালেন, ষষ্ঠীর দিন সকালে অধিবাস ও সন্ধ্যায় বেলতলায় ষষ্ঠীকল্পের মধ্য দিয়ে পুজো শুরু হয়। সপ্তমীর দিন পরিবারের বড় পুকুরে নবপত্রিকা স্নান পর্বের পরেই নবপত্রিকা ও মঙ্গলঘট এনে পুজো মন্ডপে প্রতিষ্ঠা করা হয়। অষ্টমীর দিন সন্ধিপুজো করা হয় জাঁকজমকের সঙ্গে। নবমীর দিন সন্ধ্যায় দেবী চামুণ্ডার মন্দিরে পুজো নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন রাতে সেখানেই পুজো হয়। এখানে কুমারী পুজো হয়। দশমীর দিন কুমারীকে মণ্ডপে নিয়ে এসে দেবীর সামনে পুজো করা হয়।
এদিন পরিবারের মঙ্গলের প্রতীক হিসাবে “শঙ্খচিল যাত্রা” নামের একটি অনুষ্ঠান হয় ঐতিহ্য মেনে। ফাঁকা মাঠে নিষ্ঠাভরে আকাশে শঙ্খচিল খোঁজা হয়, দেখা পেলে শুরু হয় বিসর্জনের প্রস্ততি।
SARADINDU GHOSH