বারুইপুরের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা মমতা। একসময় তিনি কলকাতায় এক বেসরকারি সংস্থায় রিসেপশনিস্টের কাজ করতেন। সংসার সামলে রোজ সকালে বারুইপুর থেকে ট্রেনে বালিগঞ্জ যেতেন। সেখান থেকে কর্মস্থলে। কাজ সেরে আবার ট্রেন চেপে ফিরতেন বারুইপুরে। ২০১০ সালে এরকমই একদিন বাড়ি ফেরার পথে ট্রেনে অ্যাসিড হামলা হয় তাঁর উপর।
মমতা জানান, রোজকার মতোই সেদিনও ফেরার পথে সন্ধ্যাবেলা বালিগঞ্জ থেকে ট্রেন ধরেন। ট্রেন ছাড়ার মুখে কিছুটা দৌড়েই মহিলা কামরায় ওঠেন তিনি। সেই সময়ই অ্যাসিড ছুড়তে ছুড়তে ওই কামরা থেকে নেমে যাচ্ছিল কয়েকজন দুষ্কৃতী। মমতার মুখে-শরীরে এসে লাগে অ্যাসিড। পাশাপাশি আরও ১১ যাত্রী জখম হন সেই ঘটনায়। কিছুটা এগিয়ে ঢাকুরিয়া রেল বসতির কাছে ট্রেনের গতি কমতেই লাফিয়ে নেমে পড়েন তাঁরা। বসতির বাসিন্দারাই তাঁদের প্রাথমিক শুশ্রুষা করেন। পরে রেল পুলিশ এসে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
advertisement
আরও পড়ুন: নাতনির বিয়েতে উদ্দাম নাচ! তারপরই গুরুতর অসুস্থ ৮৮ বছরের ধর্মেন্দ্র, কী হয়েছে তাঁর
বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চিকিৎসা চলে মমতার। তবে একটা চোখ নষ্ট হয়ে যায়। ওই ঘটনার পর চাকরি চলে যায় মমতার। ছেড়ে চলে যান স্বামীও। মায়ের সঙ্গে থাকতেন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফেরার কিছুদিনের মধ্যে মৃত্যু হয় বৃদ্ধা মায়েরও। একা হয়ে পড়েন মমতা। নতুন কাজ জোগাড়ের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় মুখে-শরীরের ক্ষত চিহ্ন, পোড়া দাগ।
মমতা জানান, লোকজন এড়িয়ে চলতেন। সেভাবে কাজ মিলত না। ক্রমশ নিজেকে গুটিয়ে নেন মহিলা। কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। সেই সময় দাদার পরিবারের তরফে একবেলা খাবার মিলত। তা দিয়েই কোনওরকমে দিন গুজরান করতেন তিনি। পরে অ্যাসিড আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা বারুইপুরের এক সংগঠনের হাত ধরে ঘর থেকে বেরোন তিনি। অ্যাসিড আক্রান্ত আরও মহিলাদের সঙ্গে মিলে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হন। ধীরে ধীরে আত্মবিশ্বাস ফেরে। শেষ পর্যন্ত বছর খানেক আগে নিজেই কিছু করার ইচ্ছা থেকে তৈরি করে ফেলেন একটি ঠেলা গাড়ি। সেই ঠেলাগাড়ি নিয়েই রোজ বিকেলে বাড়ির কাছে পাড়ার মোড়ে এসে বসেন মমতা। চা, বিস্কুট, ঘগুনি বিক্রি করেন। রুটিও তৈরি করেন। পাড়ার অনেকেই রাতে খাবারের জন্য কিনে নিয়ে যান মমতার বানানো রুটি। চা-ঘুগনি খেতেও ভিড় করেন অনেকে। এই ভাবেই একা জীবনের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন অ্যাসিড আক্রান্ত মহিলা।
সুমন সাহা