বাঙালিদের সবথেকে বড় উৎসব দুর্গাপূজার ক্ষেত্রে মহাসপ্তমীতে অধিকাংশ জায়গাতেই ঘট আনার রীতি থাকলেও বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত বালিজুড়ি গ্রামের রায় পরিবারের দূর্গা পূজার ঘট আসে অনেক আগে। এই পুজো করা হয়ে থাকে নবমাদিকল্পে আদ্রা নক্ষত্র সংযুক্ত বোধনেশ্বরীতে মায়ের আগমন ঘটে। সেদিন থেকেই শুরু হয় পুজো এবং তা চলে বিজয়া দশমী পর্যন্ত। প্রতিবছর অন্ততপক্ষে ১৫ দিন ধরে এই রায় পরিবারে পুজো হয়। আবার কোন বছর মলমাস পড়লে পুজোর দিন সংখ্যা বেড়ে হয়ে যায় ৪৫ দিন বা তার বেশি।
advertisement
রায় পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের এই পুজোর বয়স কমপক্ষে ৫৫৫ বছর। বোধনেশ্বরীতে মায়ের ঘট আনা হয় যমুনা সায়র থেকে। এই পুজোর প্রতিষ্ঠা করেছেন একজন সাধক। তারপর থেকেই ওই সাধকের প্রতিষ্ঠা পূজোর রীতি মেনে বছরের পর বছর ধরে এই পুজো চলে আসছে। পুজোর সময় পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও এলাকার বাসিন্দারা এই পুজোকে কেন্দ্র করে আনন্দে মেতে ওঠেন। তবে গত দু'বছর ধরে করোনা সংক্রমণের জন্য সেই আনন্দেই কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে।
পরিবারের সদস্য চন্ডী প্রসাদ রায় জানিয়েছেন, "পুজোর প্রতিষ্ঠার সময় আমাদের বংশে দুজন মহাপুরুষ ছিলেন। একজন হলেই জিৎ বাহন রায় এবং অন্যজন হলেন হীরারাম রায়। সাধকের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পুজোর পর তাদের হাত ধরেই বংশপরম্পরায় এই পুজো চলে আসছে।"
আরও পড়ুন: এক লহমায় ২৬৩ বছরের ইতিহাস পরিক্রমা! পুজোর আগে কলকাতার জন্য কল্পতরু শোভাবাজার রাজবাড়ি
এই পুজোর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে চন্ডী প্রসাদ রায় জানিয়েছেন, "বোধনের দিন, মহা সপ্তমীর দিন এবং মহাষ্টমীর দিন বলিদান হয়ে থাকে। তবে মহাষ্টমীর দিন এই মন্দিরে বলিদান না হওয়া পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী কোন গ্রামের বলিদান হয় না। মহা নবমীর দিন ছাগ বলির ছাড়াও চাল কুমড়ো বলি, আখ বলি হয়ে থাকে। বিজয়া দশমীর দিনেই মায়ের বাড়ি বিসর্জন হওয়ার পাশাপাশি সেই দিনই রাতে প্রতিমা বিসর্জনের রীতি রয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের সময় বাজি এবং বাদ্যযন্ত্র সহকারে নিরঞ্জন হয়ে থাকে।"
বীরভূমের ঐতিহ্যবাহী যে সকল দুর্গাপুজো রয়েছে তার মধ্যে দুবরাজপুর ব্লকের এই বালিজুড়ি গ্রামের দুর্গাপুজো অন্যতম। পাশাপাশি এই দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য ছাড়াও রয়েছে ওই রায় পরিবারের আলাদা গুরুত্ব। যে কারণে গ্রামের নাম বালিজুড়ি হলেও তা রায় বালিজুড়ি নামে পরিণত হয়েছে।