কেমন যেন থমকে যেতে হয় বাড়ির সামনে এলে। একের পর এক ছবি মনে ভিড় করে। সত্যিই এই বাড়ির পুজোয় রমরমা হবে না তো আর কোন বাড়িতে হবে। একটা সময় সাতটা গ্রামের প্রজা অংশ নিতেন পুজোয়। যাত্রা, পালাগান কীই না হত। কিন্তু বড় জীর্ণ অবস্থা বাড়ির। আর্থিক অনটনে খসে গেছে পলেস্তারা। বহুদিন সংস্কার নেই নাটমন্দিরের।
advertisement
কিন্তু একটা তো সময় ছিল, যখন চতুর্ভুজ চোঙদার এই পুজোকে গোটা বাংলায় পরিচিত করেছিলেন। চট্টগ্রামের চ্যাটার্জিরা চোঙদার হলেন কিন্তু নিখাদ ব্যবসার কারণে। বাঁশের চোঙে রাজস্ব পাঠাতেন বলে। প্রথমে পুজো শুরু হয়েছিল তালপাতার ছাউনিতে। তারপর বিশাল দুর্গাদালানে পুজো শুরু হল ঘটা করে।
একবার পুজোয় সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন চতুর্ভুজ চোঙদার। বুঝতে পারেন চলে যাওয়ার সময় এসেছে। সেই কথা জানান স্ত্রীকে। স্ত্রী তাঁর সঙ্গে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। দু-জনের ইচ্ছামৃত্যু হয়। তবে তাঁদের দাহ না করে এই ঠাকুরদালানে সমাধিস্থ করা হয়। তাই আজও পুজোর সপ্তমীতে সমাধি স্থলে হোমকুন্ড জ্বালানো হয়, যা নেভে দশমীতে।
চোঙদার বাড়ির পুজো হয় শাক্তমতে। তাই সরস্বতীর রং নীল। এখানে দেবীর আবাহন আছে, বিসর্জন নেই। প্রতিমা বিসর্জন হলেও সারা বছর দেবীর ঘট রেখে পুজো করা হয়। এই দুর্গাকে শাকম্বরী দুর্গাও বলা হয় তাই বোধনের পর এ বাড়িতে শাক, বড়ি টক খাওয়া নিষিদ্ধ।
চোঙদার বাড়ির পুজোর যাবতীয় কাজ করেন পুরুষরাই। অন্দরমহলে অন্নভোগ রাঁধেন মহিলারা।প্রতিদিন একান্নটা পাত্রে দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়।
অতীতের এই রমরমা আজ অনেকটাই ফিকে। কিন্তু ভক্তি ও আনন্দ কোনওটাই বিন্দুমাত্র কমেনি। তাই প্রতিবছর চোঙদার বাড়ির পুজোয় কটা দিন প্রাণ ফিরে পায় দুর্গাদালান।