#বাঁকুড়া: সোমসারের বিখ্যাত পাল বংশের ৩০০ বছরের দুর্গা পূজা।দামোদর আর শিলাবতী যেখানে মিশেছে সেখানেই একসময় দাপিয়ে জমিদারি চালাতেন বাঁকুড়ার সংসার গ্রামের পাল বংশ। দামোদরের তীরে গড়ে উঠেছিল সুবিশাল জমিদার বাড়ি। সেই বাড়ির বেশিরভাগ অংশ আজ কেবল ধ্বংসস্তূপ। শুধু অতীতের সেই বনেদিয়ানা ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে চলেছে বিশাল প্রসাদের একাংশ আর প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন দুর্গাপূজা। আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে বিলিতি বস্ত্রের ব্যবসায় ফুলে-ফেঁপে উঠেছিল বাঁকুড়ার সোমসার গ্রামের বাসিন্দা পালের। তাঁদের বস্ত্র ব্যবসা কলকাতা কেন্দ্রিক হলেও গ্রামের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল অটুট।
advertisement
এই পালদেরই পূর্ব-পুরুষ চন্দ্রমোহন পাল নিজের ব্যবসার প্রয়োজনে গঙ্গার তীরে একটি ঘাট নির্মাণ করেন। সেই খাট আজও চাঁদপাল ঘাট নামে পরিচিত। বিলিতি বস্ত্রের ব্যবসার মুনাফায় সেই সময় কলকাতার অভিজাত এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২টি, বর্ধমানে ২০ থেকে ২২টি ও সোমসার গ্রামে পালেরা তৈরি করে বিশাল বাড়ি। ব্যবসার পাশাপাশি সোমসার এলাকায় মোট ৬টি তালুক কিনে শুরু হয় জমিদারিও। জমিদারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে সোমসারের জমিদার বাড়িতে শুরু হয় দুর্গা পূজাও। সারাবছর ব্যবসার কাজে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ালেও পূজার সময় ফি বছর পাল বংশের সকালে এসে যোগ দেন সোমসার গ্রামে। প্রজাদের মধ্যে বিলি করার জন্য কলকাতা থেকে বিলিতি বস্ত্র বোঝাই করে বজরা এসে ভিড়ত সোমসার গ্রামের পাশে থাকা দামোদরের তীরে। আলোর রোশনাই, নহবতের সুর, যাত্রাপালা, রামলীলা, পুতুল নাচ ও কবিগানের আসর... সব মিলিয়ে পুজোর চার দিন পাল বাড়ির সকলে মেতে উঠতেন আনন্দ উৎসবে।
পুজোর সময় গ্রামের মানুষ বাদ দিয়েও আশপাশের গ্রামের মানুষ ভিড় জমাতে পাল বংশের জমিদার বাড়িতে। তবে এ বছর করোনা আতঙ্কের জেরে কিছুটা হলেও ভাঁটা পড়বে আনন্দে। কারনা আবহে ভিড় এড়াতে গ্রামের মানুষজনদের জমিদার বাড়িতে প্রবেশের ক্ষেত্রে যেমন নিষেধাজ্ঞা রাখা হচ্ছে। তেমনি বহু আত্মীয়-স্বজন এ বছর পুজোয় অংশ নিতে পারবেন না বলে জানাচ্ছেন পাল বংশের নতুন প্রজন্ম।