রূপকের বাবা ১০০ দিনের কাজ করেন। সোজা কথায় ঘাটালের পাঁচবেড়িয়া রামচন্দ্র শিশুশিক্ষা মন্দিরের এই মেধাবী ছাত্রের বাবা দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন। কলকাতাতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যথেষ্ট উদ্বেগজনক। তার উপরে ঘাটাল থেকে এলে হাওড়া জেলাও পেরিয়ে আসতে হবে। বাসে করে এলেও কলকাতাতে পরীক্ষার সময় মত আসতে পারবে না। তার উপরে বাসে করে এলে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা থাকছেই। আবার তাই বাবা-ছেলের মনোকামনা পূরণের জন্য ভোর পৌনে চারটে নাগাদ বাইকে করে ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ঘাটাল থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ এর বেসরকারি সংস্থার অফিসে পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় চার ঘণ্টা। তার উপরে সঙ্গী বৃষ্টিও। এ প্রসঙ্গে রূপকের বাবা অশোক সাহা বলেন " কি করব বলুন ছেলে পরীক্ষা দিতে চায়। ছেলের স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি তো বাবা হিসাব এইটুকু করতেই পারি। করোনার জন্য বাসে ছাড়ার ভরসা হয়নি। তার উপরে সোমবার লকডাউন থাকায় ছেলেকে নিয়ে তাই বাইকে করে নিয়ে চলে এলাম। খরচা হচ্ছে, পরিশ্রম হচ্ছে কিন্তু ছেলে আগামী দিনে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলে ওর থেকে বেশি খুশি আমি হব না।"
advertisement
এ রাজ্যের মোট ১৫ টি পরীক্ষা কেন্দ্রে এই প্রবেশিকা পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার মূলত আর্কিটেকচারের পরীক্ষা ছিল। পশ্চিম মেদিনীপুর এমনকি তার সংলগ্ন কোন অঞ্চলে এই প্রবেশিকা পরীক্ষার কোন পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল না। এমনকি যখন ফর্ম ফিলাপ করতে হয় তখন জায়গা বাছাইয়ের জন্য একমাত্র কলকাতা এবং তারপরে শিলিগুড়ি সহ বেশ কয়েকটি এলাকার নাম ছিল। কিন্তু সেখানে পশ্চিম মেদিনীপুর সংলগ্ন কোন এলাকার নাম না থাকায় শেষমেষ পছন্দের জায়গা হিসেবে কলকাতা কেই দেয় এই মেধাবী ছাত্র।
গ্রামের মধ্যে সবথেকে বেশি নম্বর পেয়ে এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে রূপক সাহা। কিন্তু কোনভাবেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ তার উচ্চশিক্ষার উদ্যমকে দমিয়ে রাখতে পারিনি। তাই বাবার ভরসাতেই ছেলে এখন কলকাতায় এসেই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়। তবে রূপকের ইঞ্জিনিয়ার এর থেকে বেশি ইচ্ছে চিকিৎসক হওয়ার। এদিন সকাল ৯ টা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত রূপক যাবতীয় স্বাস্থ্য বিধি মেনেই পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা কেন্দ্রে থেকে বেরিয়ে এসে রূপক বলে " ঘাটালে বন্যা হয়েছে। করোনার ভয় আছে। কিন্তু আমাদের কাছে এই ধরনের পরীক্ষা সুযোগ, উচ্চশিক্ষার সুযোগ একবারই আসে। আর তাই বাবার ভরসাতেই কলকাতাতে এসে পরীক্ষা দিয়ে গেলাম।"
তবে আগামী দিনে কী হতে চাই সেই প্রসঙ্গে রূপক বলে " আগামী ১৩ ই সেপ্টেম্বর সর্বভারতীয় মেডিকেল প্রবেশিকা পরীক্ষাও আমি দেব। ওই পরীক্ষা কেন্দ্র অবশ্য দুর্গাপুরে পড়েছে। আমার ইঞ্জিনিয়ার এর চেয়ে চিকিৎসক হওয়ার বেশি ইচ্ছে। বাকিটা অবশ্যই নির্ভর করছে আমি কী রকম পরীক্ষা দিচ্ছি তার উপর।"
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়