প্রযুক্তি নির্ভর এই আধুনিক যুগে দাঁড়িয়ে যখন আগুন জ্বালানো সবচেয়ে সহজ কাজ, তখন বেরা বাড়ি এখনও ধরে রেখেছে প্রকৃতির আলো-আগুনের সেই পুরোনো যোগসূত্র। আর এই প্রথাই আজও ভগবানপুরের দুর্গাপুজোকে আলাদা করে তোলে। যা দেখতে প্রতিবছর এলাকাবাসীদের ভিড়ে গমগম করে বেরা বাড়ি চত্বর। এ বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা কাহিনি। স্থানীয়দের বিশ্বাস, একসময় দেবী গাংচিল রূপে এসে পুজোগ্রহণ করতেন। পরিবারের সদস্যরা তো বটেই, গ্রামবাসীরাও সেই বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে আছেন। যদিও এখন আর গাংচিল দেখা যায় না, তবুও তাঁরা মনে করেন দেবী জাগ্রত। মানত পুরণের জন্য অনেকে আসেন, কেউ পুত্র কামনায় বড় বাতাসা দেন, আবার কেউ বোবা সন্তানের মুখে কথা ফোটার আশায় ওল উৎসর্গ করেন।
advertisement
এই পুজোর সূচনা করেছিলেন পরিবারের আদিপুরুষ জমিদার দর্পনারায়ণ বেরা। তিনি চিরকুমার ছিলেন। সেই সূত্রে এখনও প্রথা অনুযায়ী দু’জন অবিবাহিত ব্রাহ্মণের কাঁধে ভর করে কলা বউকে দিঘিতে স্নান করান হয়। এখানে কোনও পশুবলি হয় না। প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয় কনকষষ্ঠীর দিন। আগে পুজোর সময়ে ব্রাহ্মণরা এক লক্ষ দুর্গা মন্ত্র জপ করতেন, যদিও এখন আর তা হয় না। তবুও নৈবেদ্যে এখনও এক কুইন্টাল চাল দেওয়া হয়।
একসময় নবমীতে পাত পেড়ে ভোজনের আয়োজন হত । এক পয়সা করে দক্ষিণা দেওয়া হত। দিঘি থেকে নৌকায় ঘট আনার রীতি ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমিদারি হারিয়ে যাওয়ায় সে সব ঐতিহ্য আজ অতীত। সামান্য দেবোত্তর সম্পত্তি ও স্থানীয় সাহায্যেই এখন পুজো খরচ বহন করা হয়।তবুও সবকিছুর মাঝেই টিকে আছে এক অমূল্য ঐতিহ্য, আতস কাঁচের মাধ্যমে আগুনে হোমের অগ্নি সংযোগ।
এলাকাবাসীদের মতে, এটি কেবল পুজোর রীতি নয়, বরং প্রকৃতির শক্তির প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক। দশমীতে দেবী প্রতিমার বিসর্জন হয় দিঘির জলে। তবে বিসর্জনের আগে প্রতিমাকে পুরো দিঘি প্রদক্ষিণ করান হয়। ভগবানপুরের বেরা বাড়ির দুর্গাপুজো তাই আজও প্রমাণ করে, আড়ম্বর কমলেও ঐতিহ্যের আলো কখনও ম্লান হয় না।