বহু দূর-দূরান্তের মানুষজন ছাড়াও বসু পরিবারের বাসিন্দারা অষ্টমীতে কোদালিয়ার (Kodalia) বসতবাড়িতে ভিড় জমান পুজো দেখার জন্য। আর দশমীতে বিজয়ার পর, তাঁরা আবার ফিরে যান। তবে এই পুজোয় বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে ওঠে অষ্টমীর সন্ধ্যা। আজও সন্ধি পুজো দেখতে দেখতে নস্টালজিক হয়ে যান এলাকার মানুষ।
দক্ষিণ শহরতলির সোনারপুর (Sonarpur) স্টেশনের পরবর্তী স্টেশন সুভাষগ্রাম। সেখান থেকে রিকশা, অটো করে দু কিলোমিটার পথ গেলেই সুভাষচন্দ্রের পৈতৃক ভিটে । নেতাজির ভগ্নপ্রায় বাড়ি, বর্তমানে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নতুন করে সেজে উঠেছে। যতটুকু পুরনো বিল্ডিং অবশিষ্ট আছে, সেটাতে চোখ বোলালেই দেখা যায় চুন-সুড়কির মোটা দেওয়াল। উঠোনে সবুজ ঘাসে ভরা বাগিচা। সেখান থেকেই ধাপে ধাপে লাল রংয়ের সিঁড়ি দিয়ে বসু বাড়ির ঠাকুর দালানে প্রবেশ করতে হয়। সাদা রঙের মস্ত এই ঠাকুরদালানে প্রতিমার গায়ে মাটি লেগেছে, পড়েছে চুন ও রঙের প্রলেপ। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
advertisement
আরও পড়ুন : কয়েকশো বছর ধরে এই সাবেক দুর্গোৎসবের নবমীতে করা হয় মহামারি পুজো
শোনা যায়, তিনশো বছর আগে যখন এই বসু বাড়িতে প্রথম দুর্গা পুজো শুরু হয়েছিল তখন এ তল্লাটে আর কোন বারোয়ারি পুজো ছিল না। অনেকের দাবি, অষ্টমীর দিন সুভাষচন্দ্র বসু নিজে আসতেন বাড়ির এই পুজোতে। সারাদিন পুজোতে অংশগ্রহণের পর রাত্রিবেলায় এলাকায় বিপ্লবীদের নিয়ে গোপন মিটিং করতেন। এই বাড়ির দুর্গাপুজোয় রয়েছে পরতে পরতে নস্টালজিয়ার ছোঁয়া।
কোদালিয়ার বাসিন্দা উমাকুমার রায় বলেন, ‘‘দেবীরাজ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি বছরের পর বছর এই পুজোর তত্ত্বাবধান করতেন। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর আর কেউ সে ভাবে তত্ত্বাবধান করেন না। তবে এলাকার মানুষের আলাদা রকমের এক উন্মাদনা ও নস্টালজিয়া আছে এই পুজোকে ঘিরে।’’
আরও পড়ুন : জলঘড়ি মেনে সন্ধিপুজো, ৫ গ্রামে রিলে সিস্টেমে পৌঁছয় সন্ধির ডাক, গায়ে কাঁটা দেওয়া পুজোর ইতিহাস...
তাঁর থেকে জানা গেল, বসু পরিবারের যারা শরিক বেঁচে রয়েছেন তাঁদের বেশিরভাগ হয় কলকাতায় কিংবা বিদেশে থাকেন। তবে সবাই চেষ্টা করেন অষ্টমীর দিন কোদালিয়ায় নেতাজির পৈতৃক ভবনে একত্রিত হয়ে সন্ধি পূজায় অংশগ্রহণ করার। ঠাকুরদালানেও নেতাজি তাঁর জীবনের বেশ কিছুটা মূল্যবান সময় কাটিয়েছেন বলে জানা যায়।
রাজপুর সোনারপুর পুরসভার প্রশাসক পল্লব দাস বলেন, ‘‘ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পৈতৃক বাসভবনের সংস্কারের কাজ করা হয়েছে। আরও বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এখানে একটি অতিথি নিবাসও তৈরি হয়েছে। পর্যটকরা এখানে থেকেই পুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।’’
যদিও করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই এলাকাবাসীরা এই পুজোয় অংশ নেবেন বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।
প্রতিবেদন- রুদ্রনারায়ণ রায়