সকাল থেকে অভিযোগ এলেও খাদ্য়মন্ত্রী অবশ্য সকাল ১০টা নাগাদ ব্রেকফাস্ট সেরে বেরোলেন হাবড়ার ভাড়া বাড়ি থেকে। বিশ্বাস করেন ভাগ্যে। ভরসা করেন পয়া বাড়ি, গাড়ি, পোশাকে। তাই এবারের ভোটেও সল্টলেকের বাসিন্দা শুকদেব দাসের হাবড়ার বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। পছন্দের রং হলুদ। তাই হলুদ পাঞ্জাবি পরেই বেরোলেন বুথ ঘুরে দেখতে। হাবড়া শহরের বিভিন্ন বুথে 'বালু' ঘুরে বেড়ালেও কোথাও কোনও অসুবিধা চোখে পড়েনি। কিন্তু 'বালু'র গাড়ি যশোর রোড ধরে রাউতারা গ্রাম পঞ্চায়েতের নারায়ণপুর গ্রামে ঢুকতেই দেখা দেয় উত্তেজনা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনী তাঁদের উপরে অত্যাচার করছে। মারধর করছে। ফলে মহিলারা ভোট দিতে বেরোতে রাজি হচ্ছেন না।
advertisement
নারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌছেই তাই কেন্দ্রীয় বাহিনীর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বেশ কিছুক্ষণ সময় ধরে চলতে থাকে কথা কাটাকাটি। তৃণমূল প্রার্থী বলেন, 'আপনারা ঠিক করে দেবেন নাকি কে ভোট দেবে, আর কে ভোট দেবে না! কেন লাঠিচার্জ করছেন আপনারা? কেন আপনাদের আচরণের জন্যে মানুষ ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকবে?'
এর পরেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘোষণা করেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হয় তিনি অবস্থানে বসবেন। শেষমেষ বুথের ৩০০ মিটার দূরে অবস্থানে বসেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেখান থেকেই তিনি যোগাযোগ করেন হাবড়া থানার আইসি-র সঙ্গে। বুথের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা যোগাযোগ করেন সি আরপিএফ আধিকারিকদের সঙ্গে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবস্থানে বসেছেন এই খবর পেয়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসেন গ্রামবাসীরা। ঘটনাস্থলে বাহিনী নিয়ে আসেন হাবড়ার আইসি গৌতম মিত্র।
খাদ্যমন্ত্রীর অভিযোগ পেয়ে তিনি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। তিনি গ্রামে ঢুকে গ্রামবাসীদের বোঝানোর কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে সিআরপিএফ-এর শীর্ষ আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে চলে আসেন। তাঁদের দেখেই পালটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। বাহিনীর এক শীর্ষ আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন হাবড়া বিধানসভার তৃণমূল প্রার্থী। তিনি সমস্যার কথা বলেন, যদিও কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠিচার্জ করার সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে। প্রায় ১৫ মিনিট ধরে চলতে থাকে বচসা।
শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী সিদ্ধান্ত নেয়, তারা গ্রামে থাকবে। সবাইকে ভোট দেওয়ানোর ব্যবস্থা তারা করে দেবে। এই আশ্বাস পাওয়ার পরেই নারায়ণপুর ছাড়েন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এখানেই শেষ নয়, এর পর হাবড়ার ঘোষপাড়ার একটি বুথে যান জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেখানে গিয়ে তিনি প্রায় দৌড় শুরু করেন। কারণ, ওই বুথে বহিরাগত নিয়ে এসে ভয় দেখানো হচ্ছে এমনটাই অভিযোগ ছিল। দৌড়ে গিয়ে তিনি দু'জনকে ধরেন। যদিও পাল্টা তৃণমূল প্রার্থীর দিকে তেড়ে যান একজন। এমন এক পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হয়, যা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীকে।
এর পরে অবশ্য নিজের খাসতালুকে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি খাদ্য়মন্ত্রীকে। বিকেল ৪.১৫ নাগাদ হাবড়ায় তাঁর বাড়িতে ফিরে আসেন জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিক। দুপুরের খাবার রুটি আর মাছ খেয়ে ফোনেই বাকি খবর নিতে থাকেন। দিনের শেষে একটু জিরিয়ে নিয়ে তাঁর বক্তব্য, বড়মার আশীর্বাদ আছে। ম্যাচ আমি জিতছিই।
Abir Ghosal
