বাবাকে বাঘের মুখে পড়তে দেখে প্রাথমিকভাবে হকচকিয়ে গেলেও এরপরই এগিয়ে আসে ছেলে অমিত। বাঘের সঙ্গে অসম লড়াই চলতে থাকে তাঁর। আহত বাবাকে বাঘের মুখ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে আসে সে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ছেলে অমিত বাবাকে উদ্ধার করে নিয়ে এলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি আনন্দ ধরকে। ঘটনার পর থেকেই এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
advertisement
গত বছরও সুন্দরবনে বাঘের হানায় এভাবেই মৃত্যু হয়েছিল এক মৎস্যজীবীর। তবে, সন্তান নয়, সেক্ষেত্রে বাঘের সঙ্গে লড়াইয়ে এগিয়ে এসেছিলেন ওই মৎস্যজীবীর স্ত্রী। গোসাবা থেকে ওই মৎস্যজীবী দম্পতি সুন্দরবনের ঝিলায় কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন নৌকায়। হঠাৎ বাঘ হামলা করে তাঁদের নৌকায়। মৎস্যজীবীকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে বাঘটি। আতঙ্কিত হলেও বুদ্ধি না হারিয়ে স্বামীকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তাঁর স্ত্রী। নিরস্ত্র মহিলা সেসময় আর কিছু না পেয়ে নৌকার বৈঠা দিয়েই বাঘটিকে পেটাতে থাকেন। ক্রমাগত বৈঠার গুঁতো খেয়ে পিছু হঠে বাঘ। মৎস্যজীবীকে ছেড়ে দিয়ে সাঁতরে বনের ভিতর পালিয়ে যায় সে। জখম মৎস্যজীবীকে এরপর উদ্ধার করে নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রী। কিন্তু বাঘের কামড়ে গুরুতর আঘাত লাগায় মৃত্যু হয় ওই মৎস্যজীবীর।
প্রসঙ্গত, সুন্দরবনে বাঘের হানায় মৎস্যজীবীদের মৃত্যু কোনও নতুন ঘটনা নয়। প্রায় প্রতিবছরই মধু আনতে গিয়ে বা মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে মৃত্যু হয় অনেকের। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করার জন্যই বারবার এভাবে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। যদিও প্রশাসনের পাল্টা যুক্তি, মৌলে বা মৎস্যজীবীদের বারংবার নিষেধ করা হয়েছে জঙ্গলের গভীরে বা কোর এরিয়ায় যেতে। কিন্তু নিষেধ সত্ত্বেও সেই কোর এরিয়াতেই চলে যান মৎস্যজীবীরা। একইসঙ্গে রয়েছে বসতির কারণে জঙ্গল সাফ করার প্রবণতা, যাতে বাঘের বিচরণক্ষেত্র ক্রমশ কমে আসছে। এবং তার ফলেই বাইরে বেরিয়ে পড়ছে বাঘ। আঘাত হানছে মানুষের উপর।
----অর্পণ মণ্ডল
