কালের নিয়মে জৌলুস কিছুটা কমলেও, নিয়মনিষ্ঠা পালনে একটুও খামতি রাখছেন না মিত্র জমিদার বাড়ির সদস্যরা। ১১৩৬ সালে শুরু হয় মিত্র জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো। কথিত আছে স্বয়ং মা দুর্গা মানুষরূপে এসে বাড়িতে গৃহকর্তী ভুবনমোহিনী মিত্রকে বলেন, এই পুজো শুরু করতে। এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি কাকতালীয় ঘটনা। বাড়ির একটি কাঁঠাল গাছে অসময় কাঁঠাল ফলে। সেই কাঁঠাল পূজার নৈবেদ্য হিসাবে মা দুর্গাকে নিবেদন করা হয়। জমিদার বাড়ির মধ্যে তৈরি করা হয় সুবিশাল দালানকোঠা। সেই দালান বাড়িতে এখনো পুজো হয়ে আসছে মা দূর্গার।
advertisement
দক্ষিণ ২৪ পরগনা সুন্দরবনের কাকদ্বীপ, নামখানা , রায়দিঘি , মথুরাপুর ইত্যাদি এলাকায় জুড়ে জমিদারি প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করেছিল মিত্ররা। অতীতে পুজোর সময় জমিদার বাড়ি মানুষের ভিড়ে গমগম করত। জমিদার বাড়িতে প্রজারাই পুজোর যাবতীয় জিনিসপত্র পাঠাতেন। কিন্তু কালের নিয়মে জমিদারি প্রথার অবসান ঘটেছে। অতীতের সেই জৌলুস হারিয়েছে মিত্র বাড়ির পুজো। প্রাচীন নিয়ম মেনেই জন্মাষ্টমীতে মা দুর্গা কাঠামো পূজার পাশাপাশি মহালয়ায় মা দুর্গার চক্ষুদান করা হয়। পূর্বে সাতটি করে পাঠা বলির ব্যবস্থা থাকলেও, বর্তমানে দুটি করে পাঠা বলি হয়। বাড়ির সামনেই সুবিশাল জলাশয়ে কলা বৌ স্নান থেকে শুরু করে প্রতিমা বিসর্জন সবটাই করা হয়ে থাকে। কর্মসূত্রে পরিবারের সদস্যরা ভিন রাজ্যে ও ভিনদেশে থাকলেও, পুজোর চারদিন সকলে একত্রিত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন প্রবীণ থেকে নবীন সদস্যরা।
অতীতের মতন এখনো পুজোর ক'দিন ব্যবস্থা থাকে নরনারায়ন সেবারও। যথাসম্ভব অতীতকে আগলে রেখে বেঁচে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন জমিদার বাড়ির সদস্য শুভেন্দু মিত্র। তিনি জানান, 'পুজোর জৌলুসে কিছুটা ভাটা পড়লেও নিয়ম নিষ্ঠার কোনো রকম ভাটা পড়েনি। আনুমানিক ৩০০ বছরের পুরনো এই পুজো একইভাবে বংশ-পরম্পরায় পুরোহিতরা করে আসছেন। বংশ পরম্পরায় পুজোর সময় ঢাকিদের ডাক পড়ে। অতিথিদের দেড় মণ চালের নৈবেদ্য অর্পণ করা হয় মা-কে'। প্রতিবছর বহু মানুষ ভিড় করেন জমিদার বাড়ির এই পুজো দেখতে। তবে করোনার স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনেই পূজোর সমস্ত কিছু পরিচালনা করা হয়। সে ক্ষেত্রে দর্শনার্থীদেরও মানতে হবে সেই বিধি নিষেধ, এমনটাই জানানো হয় মিত্র জমিদার বাড়ির পক্ষ থেকে।
রুদ্র নারায়ণ রায়
আরও পড়ুন: পুজোর ভিড় থেকে দূরে, নিরিবিলিতে একদিন কাটাবেন? ঘুরে আসুন শরৎচন্দ্রের বাসভবনে