প্রতিবছর জন্মাষ্টমীতে জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানে মায়ের কাঠামোতে মাটির প্রলেপ পড়ে। গত বছর তার ব্যতিক্রম হয়েছে মৃন্ময়ীর আরাধনায়। প্রসন্নময়ী মায়ের মন্দিরে ঘট পেতে পুজোর পর সেই ঘট ঠাকুরদালানে নিয়ে যেতেন জমিদার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু কোভিডের জন্য সেটি হচ্ছে না গত বছর থেকে। প্রতিবছর ঠাকুরদালানে মায়ের প্রতিমা প্রতিষ্ঠিত হয় ষষ্ঠীতে। তবে কোভিড পরিস্থিতির জন্য প্রসন্ন মায়ের মন্দিরে এবারও শুধু ঘট পুজোই হবে।
advertisement
জমিদার বাড়ীতে ষষ্ঠীর দিনে কালীমন্দির থেকে কলা বউ নিয়ে এসে মায়ের অস্ত্র দান করা হয়। এবং সন্ধ্যা আরতি, অষ্টমী, নবমী, দশমী, নিয়ম করে শাস্ত্র মতে পুজো কিছুই হচ্ছে না এবার। শোনা যায় এই পুজো উপলক্ষে সেকালে মোষ বলির প্রচলন ছিল। পরে তা পাঁঠা বলিতে রূপান্তরিত হয়। ১৯৯৭ সালে বলি প্রথা নিয়ম করে বন্ধ হয়ে যায়। বিগত কয়েক বছর ধরে চালকুমড়ো ও আঁখ বলি দিয়ে নিয়ম রক্ষা করা হয়। জমিদার পরিবারের সদস্যদের দাবি পৃথিবীকে শান্ত করতেই দেওয়া হয় এই বলি।
কথিত আছে মুখোপাধ্যায়দের পূর্বপুরুষরা পূজার সূচনা করেছিলেন যশোহরে। বংশের আদি পুরুষ রাম মুখোপাধ্যায় উমার আরাধনা শুরু করেন যশোরের সারশা এলাকায়। পরে তার বংশধরেরা গোবরডাঙ্গা চলে আসেন। পুত্র শ্যামরাম মুখোপাধ্যায় গোবরডাঙার ইছাপুরে চৌধুরী বাড়ির জামাই ছিলেন। এই শ্যামরামের পুত্রই হলেন খেলারাম মুখোপাধ্যায় তিনি মাতুলালয়ে পুজো শুরু করেন। সেই সময়ে ইংরেজ শাসন কাল। ২৪ পরগনার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন হিঙ্কল সাহেব। সাহেবের কাজের তদারকি করতেন খেলারাম। তাতে খুশি হয়ে মাতুলালয়ের বেশ কিছু জমি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ওই ইংরেজ সাহেব।
আরও পড়ুন- আজ মহালয়া, সেজে উঠেছে কলকাতা, উত্তর-দক্ষিণের ৮ পুজোর মণ্ডপসজ্জা দেখুন ছবিতে...
সেখানেই তৈরি হয় জমিদার বাড়ি। সেসব এখন ইতিহাস। ইতিহাসে রয়েছে কামান দেগে সন্ধি পুজোর (Durga Puja 2021) ঘোষনাও। তবে জমিদার বাড়িতে থেকে গিয়েছে একই জায়গায়। কিন্তু নিয়ম মেনে এবার আর পুজো হচ্ছে না জমিদার বাড়ীতে। প্রতি বছরের মতো উমা ঠিকই আসছেন। কিন্তু জমিদার বাড়িতে নয়। এই কারণে জমিদার বাড়ির সদস্য ও গোবরডাঙাবাসীর মন ভালো নেই। তবে জমিদার পরিবারের এখন অষ্টম পুরুষের সদস্যরাই এই পুজো এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তারা চাইছেন আগামী দিনে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে, আবার পুরনো জৌলুস ফিরে আসবে গোবরডাঙা জমিদার বাড়িতে।
রাজর্ষি রায়