#বারাসত: অবশেষে পিছিয়ে গেল বারাসতে মুখ্যমন্ত্রীর সভা। হবে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী মোদির সভা। রাজনৈতিক ভাবে উত্তপ্ত বারাসাত। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একই দিনে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসতের মাটিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্বাচনী জনসভার প্রস্তুতি চলছিল। স্বাভাবিক কারণেই এই দুই হেবি ওয়েট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ত্বের সভা ঘিরে ব্যাপক উন্মাদনা তৈরি হয় এলাকায়। পাশাপাশি গন্ডগোলের আশঙ্কাও করছিলেন বিরোধীরা। কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে সম্পূর্ণ শহরকে মুড়ে ফেলার চেস্টায় ছিল প্রশাসন।
advertisement
তবু যে কোনও সময় দুই প্রতিপক্ষ আমনে সামনে হওয়ার আশঙ্কায় ছিলেন শহরের নাগরিকরা। দুই যুযুধান পক্ষকে একই দিনের সভার অনুমিত দেওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ও নির্বাচনের প্রাক্কালে শান্ত বারাসাত অশান্ত হতে পারে বলে সংযুক্ত মোর্চার পক্ষ থেকে আওয়াজ তোলা হয়েছে। অন্যদিকে শাসক দল তৃণমূল ও প্রশাসনের চক্রান্তে একই দিনে দু’টি সভা ফেলে গন্ডগোল করতে চাইছে বলে সুর চড়া করেছে বিজেপি। তাদের অভিযোগ, এটা গন্ডগোল পাকানোর পরিকল্পিত চক্রান্ত। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে গন্ডগোলের কোনও সম্ভাবনাই দেখছেন না স্থানীয় নেতারা। তাঁদের দাবি সকাল ১১টা নাগাদ তাদের দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা হবে বারাসত স্টেডিয়ামে। আর বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ বারাসাত কাছাড়ি ময়দানে সভা করবেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে দু’টি সভার মধ্যে বিস্তর সময়ের ফারাক থাকছে। সে ক্ষেত্রে কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গন্ডগোল না পাকালে গন্ডগোলের কোনও সম্ভাবনাই নেই দাবি জেলা তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র সুনীল মুখোপাধ্যায়ের। তবে এ দিনের সভা নিয়ে পুলিশ প্রশাসন বেশ উদ্বিগ্ন, পাশাপাশি বেশ কিছুটা চাপেও ছিল তারা।
বারাসতে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা নিয়ে বেশকিছুদিন ধরেই প্রশাসনের সঙ্গে দড়ি টানাটানি চলছিল। দিন আগে পিছু করেও সমস্যার সমাধান হচ্ছিল না। বিষয়টি নিয়ে কচলাকচলিতে ক্রমশই সেটা জেদাজেদিতে পরিণত হয়। বিজেপির পক্ষ থেকে আগেই প্রধানমন্ত্রীর জন সভার দিন ঠিক হয়ে গেলেও শাসক দলের নেতা নেত্রীরা তাঁদের দলনেত্রীর সভা করানো নিয়ে কসম খেয়ে নেন। বিস্তর জটিলতা, প্রোটোকল সব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে অবশেষে শনিবার বিকেলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একই দিনে সভা করারা কথা ঘোষণা করে। এতে তৃণমূল তাদের জয় দেখলেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি শান্ত বারাসত অশান্ত হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছেন। পাশাপাশি দুই হেবি ওয়েট নেতার জনসভা ও তাদের উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সপ্তাহের প্রথম দিনই জেলা সদর কর্মহীন হয়ে পড়বে বলে সাধারণ মানুষের আশঙ্কা। পাশাপাশি এ দিন জেলা সদরে সাধারণের যাতায়াতেও সীমারেখা টানায় তাঁরা সমস্যায় পড়বেন বলেও অনুমান রাজনৈতিক মহলের।
বিজেপির বারাসাত সাংগঠনিক জেলার কো-অর্ডিনেটর অনুপ দাস জানান, হার নিশ্চিত জেনে গন্ডগোল পাকিয়ে ভোট বানচালের ও রাজনৈতিক ফায়দার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রশাসনের সহায়তায় তৃণমূল এই কাজ করল। এ দিন যদি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তবে তার দায় থাকবে পুলিশ প্রশাসন ও তৃণমূলের। আমরা এর কোনও দায় নেব না বলে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় আগেই জানিয়ে দিয়েছি। পূর্বনির্ধারিত প্রধানমন্ত্রীর জনসভার আগে এ ভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে বিজেপিকে ঠেকানো যাবে না বলেই দাবি করেছেন অনুপ বাবু। তৃণমূলের জেলার মুখপাত্র সুনীল মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, সকাল ১১টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী শুধুমাত্র বারাসত বিধানসভা নিয়ে ঘন্টাখানেকের সভা করে আবার চলে যাবেন ফলে কোনও সমস্যা হওয়ারই কথা নয়। অন্যদিকে সংযুক্ত মোর্চার বারাসত কেন্দ্রের প্রার্থী তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় বলেন, গন্ডগোল হলে দায় নিতে হবে প্রশাসন ও কমিশনকে।সব মিলিয়ে রবিবার রাতে তৃণমুল কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রীর সভা একদিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১২ এপ্রিলের বদলে হবে ১৩ এপ্রিল। সময় সকাল ১১ টা। আর স্থানও সেই বারাসতের বিদ্যাসাগর ক্রিড়াঙ্গন। প্রশাসনের নির্দেশেই তাদের এই দিন পরিবর্তন জানিয়েছেন তৃনমুল নেতা সুনীল মুখোপাধ্যায়।
